পেঁয়াজ আমদানিকারক চার সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট কারসাজিতে পেঁয়াজের বাজারে ক্রেতারা এখন দিশেহারা। একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দর বেড়েছে আরও ১০ টাকা।
আর আমদানিকৃত পেঁয়াজে দর বেড়েছে ৫ টাকা করে। হিসেবে গত এক সপ্তাহে দর বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। গেল বছরে এ ধরণের পরিস্থির সৃষ্টি হয়েছিলো। পেঁয়াজের হঠাৎ বাড়তি দর নিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন,এর পেছনে অমদানিকারক শিল্পগোষ্ঠীর কলকাটি রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। এবছর ভারতে বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে বুকিং রেট বাড়ায় দেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দর বেশি পড়েছে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দর (খুচরা মূল্য) প্রায় ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, তার ৩৭ শতাংশই এনেছে এই ৪ শিল্পগোষ্ঠী। তারা হলো- মেঘনা, বিএসএম, এস আলম ও সিটি গ্রæপ। তারা ২৩ হাজার ২৮৮ টন বা ৩৭ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দরও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর ছিল ৩৫ টাকা। হঠাৎ পেঁয়াজের দর বাড়ছে কেন জানতে চাইলে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে তারা যে দামে কেনেন, তা থেকে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করেন। আড়তে দর বাড়ায় তারাও বেশি দরে বিক্রি করছেন।
এদিকে পর্যাপ্ত আমদানি ও চাহিদা অনুসারে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ঠিক থাকলেও ভারতের রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, অতি মুনাফা করতে গত বছর পণ্যটির দর প্রতি কেজি ১৩০ ও এর আগের বছর সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওই সময় অসাধুরা ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে তদারকির পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে পেঁয়াজ ভর্তুকিমূল্যে বাজারে ছাড়া হবে। এ সময় কোনো ধরনের কারসাজি হলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল, প্রতিষ্ঠান সিলগালা এমনকি দোষীদের জেলে পাঠানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের বড় আড়ত মোহাম্মদীয় বাণিজ্যালয়ের সত্বাধিকারী মোজাম্মেল হক জানান, গত দুই চালানে মাত্র ৬০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছি। প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২৬০ মার্কিন ডলারে এলসি করেছি। বাংলাদেশি টাকায় প্রতি টনের দর পড়েছে ২২ হাজার ৮৭ টাকা প্রায়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বন্যা দেখা দেওয়ায় বাজারে পেঁয়াজ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। ভারতের স্থানীয় বাজারগুলোতেও দাম বেড়েছে। যে কারণে পেঁয়াজ আমদানি করে এখন কোনো লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে সরবরাহ কেমন হবে, তার ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজের মতো পচনশীল পণ্যের বাজার ওঠানামা করে। এবারের অবস্থাও হয়েছে তাই। এছাড়া অনেক পেঁয়াজ নষ্ট পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমদানিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন অনেকে। বাজারের ক্রেতারা দেশি পেঁয়াজ একটু বেশি দামে কিনলেও ভারতীয় পেঁয়াজ নিম্ন ও মধ্যবিত্তরাই বেশি কিনে। ভারতীয় পেঁয়াজের তেমন আমদানি না থাকায় এবং দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।