কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজে এবার অধ্যক্ষ ও একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সামনে আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আকতার জাহান কাকলীকে মারতে তেড়ে যান একই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন।
গত বুধবার দুপুরে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলমের কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দফায় প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন আকতার জাহানকে মারতে তাঁর দিকে তেড়ে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসময় আকতার জাহানক শারীরিকভাবে আঘাত করতে না পেরে উত্তেজিত হোছাইন অধ্যক্ষের কক্ষের দেওয়ালে একাধিকবার লাথি ও মাথা টোকান বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকেরা। প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন অধ্যক্ষের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক আকতার জাহান জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুধবার রাতে রামু থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
অপরদিকে মোহাম্মদ হোছাইনও বৃহস্পতিবার দুপুরে আকতার জাহানের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকির অভিযোগে একই থানায় জিডি করেছেন। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রামু কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম। তিনি বলেন, এ ঘটনায় নয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবারের ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের ইংরেজী বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক অহিদুল কবির জানান, কিছুদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাই আইসিটি বিভিাগের খাতার নম্বর ইনপুট দেওয়ার জন্য আকতার জাহান ম্যাডামকে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ডেকে আনা হয়।
এর কিছুক্ষন পর মোহাম্মদ হোছাইনও আসেন। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুইজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে হোছাইন ম্যাডামকে মারতে কয়েকবার তেড়ে আসে আমরা তাকে নিবৃত করি।
এ সময় হোছাইন উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষের কক্ষের দেওয়ালে দুটি লাথি মারেন সাথে সাথে মাথাও টোকান এবং গালি গালাজ করেন। আকতার জাহান কাকলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়েকদিন ধরে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। বুধবার দুপুরে একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক আমার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন ।
এ সময় হোছাইন পাশ থেকে উস্কানিমূলক নানা কথাবার্তা বলতে থাকে। এটা নিয়ে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ আমাকে ডেকে পাঠালে সেখানে চলে যাই। কিছুক্ষন পর হোছাইন অধ্যক্ষের সামনেই আমাকে মারতে তেড়ে আসেন। মেরে ফেলার হুমকি দেন। আকতার জাহান বলেন, পত্রপত্রিকায় কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে এসবের মূল হোতা এই হোছাইন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন বলেন,’ অধ্যক্ষের টেবিলে থাকা একটি গ্লাস আকতার জাহান আমাকে ছোড়ে মারতে চেয়ে ছিলেন। এ ছাড়া এর আগে তিনি আমার মা বাবার নাম ধরে গালিগালাজ শুরু করেছে।
এরপর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। এরকম আচরণ করা আমার ঠিক হয়নি।’ কয়েকজন শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষের ঘনিষ্টজন হওয়ায় হোছাইন কলেজের সিনিয়র ও জুনিয়র অনেক শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।
নিজ কক্ষে নারী শিক্ষকের সঙ্গে মোহাম্মদ হোছাইনের দুর্ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেন অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম।
তিনি বলেন, কক্ষে উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকেরা হোছাইনকে নিবৃত করেছে। এ ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাহাব উদ্দিনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।