প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ি দ্বীপ খ্যাত মহেশখালীতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান থাকলেও শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিলনা কোনো শিশু পার্ক।শিশুদের মেধা বিকাশ ও চিত্তবিনোদনে জন্য অবৈধ ভাবে দখলে থাকা সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে শিশুপার্ক নির্মাণ করেছিলেন সাবেক মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজুর রহমান। অযত্ন – অবহেলায় শিশু পার্কটি এখন প্রায় বিলীনের পথে। প্রশাসনের কোন নজরদারি না থাকায় পার্কটির এমন অবস্থা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়,২০২১ইং সালের ২২ জুলাই
স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক পাহাড়ি দ্বীপের একমাত্র শিশু পার্কটি উদ্বোধন করেছিলেন, নাম রাখা হয়েছিল শেখ রাসেল শিশুপার্ক। ছোট মহেশখালীর ইউনিয়ন পরিষদে উদ্যোগে এলজিএসপি প্রকল্পের প্রায় ১০লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিশুপার্কটি নির্মাণ করা হয়।
শিশু পার্কটি গড়ে উঠাতে সর্ব মহলে আনন্দের সঞ্চার হয়েছিল। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন স্থানীয় ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য শিশু মা-বাবার সঙ্গে পার্কে ঘুরতে আসত। শিশুরা দোলনায় চড়ে আনন্দ করত। অনেকে হাতি, চিত্রা হরিণ ও বাজপাখির প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি ও সেলফি তুলতেন। কিন্তু একবছর পেরোতেই সব চেনা রূপ যেন অচেনা রূপে পরিণত হয়। পর্যটক হীন পড়েছে পার্কটি,দেখা মিলেনা সেই প্রাণচঞ্চল শিশুদের।
শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাণচঞ্চল পার্কটির এখন বেহাল দশা,শিশু পার্ক থেকে উধাও হয়ে গেছে শিশুদের খেলনার বিভিন্ন উপকরণ। বখাটেদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে পার্কটি,ছবি তুলতেও হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার।
গত মাসে কতটাকা জমা দিয়েছে সেটা জানতে চাইলে বলেন- গত মাসে দর্শনার্থী কম আসায় হিসাব করা হয়নি। কিন্তু দর্শনার্থীর সংখ্যা ও হিসেবে অমিল দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, আগে ৫০০/৬০০ দর্শনার্থী আসলেও এখন ১০০/২০০ এর বেশী দর্শনার্থী আসে না।
দ্বীপের একমাত্র শিশু পার্কটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় একদিকে যেমন শহরের শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি এই পার্কের ভিতরেই প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। রাতের বেলায় মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাস্থল এবং নানা অসামাজিক কার্যকলাপের ভরপুর বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা আরো জানান, পার্কটি অবহেলায় পড়ে থাকায় দিনদিন এটি অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হচ্ছে।পার্কের পাশ দিয়েই যেতে হয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। আর সন্ধ্যার পর পর্যটকদেরও নানাভাবে এখান থেকে হয়রানি করা হয়। পার্কটি আবারো পাহাড় খেকোদের দখলে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা।
পার্কের দুরাবস্থার ছবি তুলতে গিয়ে হেনস্তার শিকার মহেশখালী রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি এনামুল হক জানান, শিশুপার্ক থেকে বিভিন্ন খেলনা রাইড উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা দুই গণমাধ্যমকর্মী ওই শিশুপার্কে যান। বিকেলে তারা শিশুপার্কের প্রধান ফটকে পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দা শিহাব উদ্দিন প্রথমে তাদেরকে পার্কে ঢুকতে বাঁধা দেয়।
এক পর্যায়ে তারা পার্কে ঢুকে পার্ক থেকে গোপনে সরিয়ে নেয়া পুতুল সাদৃশ্য শিশুদের খেলনা রাইডগুলোর স্থানের ছবি তুলছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, মহেশখালীতে শিশুদের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই পার্কটিতে এসে শিশুরা অনেকটা চিড়িয়াখানা দেখার আনন্দ পেত। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় সুন্দর এই পার্কটি অকাল মৃত্যুর পথে।