এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহকে নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-কর্মীচারীসহ সর্বস্থরের জনসাধারণ।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকালে সর্বস্থরের সম্মিলিত ব্যবসায়ী সংগঠনের উদ্যোগে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবীতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহরে বিশাল মানববন্ধন পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্যবসায়ীসহ হাজারো মানুষ।
ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চকরিয়া পৌরশহরের সকল মার্কেট, বিপনি বিতান ও দোকানপাট বন্ধ রেখে শামিল হন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে ব্যবসায়ীরা লতিফ হত্যার খুনিদের সনাক্তপুর্ভক অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবীতে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আগামী ৪৮ঘন্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা না হলে তারা আগামীতে আরো বৃহত্তর কর্মসুচি দিয়ে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে আসবে বলে হুশিয়ার জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মহল।
এসময় চকরিয়া পৌরশহরে সর্বসাধারণ, ব্যবসায়ী সংঘঠন, দোকান মালিক সমিতি, শ্রমিক-কর্মচারীসহ হাজারো মানুষ একাকার হয়ে মানববন্ধনে মিলিত হয়ে প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়ে বলেন, আমরা বাচঁতে চাই, আমাদের জানমালের নিরাপত্তা চাই। আমরা রাজনীতি করিনা, সামান্য ব্যবসা করে পরিবারের অন্ন যোগাতে সারাদিন ব্যস্থ থাকি।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা পৌশহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাদাঁবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ইভটিজিংকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার থেকে বাচাঁতে চাই। বর্তমানে সাধারণ ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। মার্কেট গুলোতে সারাক্ষণ বিচরণ করা কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে শংকিত থাকি। পৌরশহরের অপরাধ প্রবনতারোধে ব্যবসায়ী, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার আর্থিক সহয়োগিতায় পুরো শহরে সিসি ক্যামরা লাগানো হলেও তা অনেকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। আমরা জানিনা পৌরশহরের অপরাধ প্রবনতারোধে প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে কেন?
পরে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর স্মারকলিপি দেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা।
এসময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সামসুল তাবরীজ ও চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনী ব্যবসায়ী লতিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজারস্থ সাতকানিয়া লোহাগাড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক জেবর মুল্লুক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, চকরিয়া পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রেজাউল হক সওদাগর, চকরিয়া পৌর কাউন্সিলর মুজিবুল হক, পৌর কাউন্সিলর এম নুরুস শফি প্রমুখ।
মানববন্ধনে কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম, সহ সাধারণ সম্পাদক খালেদ ওমর রানা, নির্বাহী সদস্য আবুল কালাম, ব্যবসায়ী নেতা লোকমান সওদাগর, বাদশাসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
এতে বক্তব্য রাখেন- চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মো.রেজাউল করিম, চকরিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর মুজিবুল হক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির, চকরিয়া ওয়েষ্টার্ন প্লাজার সভাপতি যুবনেতা আজিজুল হকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা। ব্যবসায়ী লতিফ উল্লাহ হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্টিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন কক্সবাজার দোকান ব্যবসায়ী ফেডারেশন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে চকরিয়া পৌরশহরের ২নং ওয়ার্ডের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে দুর্বৃত্তরা বিকাশের এজেন্ট মোহাম্মদ লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে হত্যা করা করে। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকাও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নিহত লতিফ উল্লাহ লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সুফী পাড়ার মৃত ইলিয়াছ সওদাগরের ছেলে ও চকরিয়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরাফত উল্লাহ’র ছোট ভাই।
স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের পাশে লতিফ উল্লাহর মালিকাধীন কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে দশটার দিকে ব্যবসার কাজ সেরে দোকান বন্ধ করার সময় ৩-৪ জনের একদল দুর্বৃত্ত ক্রেতা সেজে পন্য কেনার অজুহাতে এসে নগদ টাকা ও বিকাশের মোবাইল লুটে নিয়ে লতিফ উল্লাহকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। চকরিয়া পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে।