কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এখন খুদে চিকিৎসক।
সরকারি নির্দেশনার আলোকে স্কুলপর্যায়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে তৃতীয় চর্তুথ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুদে চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে।
গতমাস থেকে বিদ্যালয়ের খুদে চিকিৎসক টিমের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ের খুদে চিকিৎসক টিমের স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা বিষয়ে সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএসসি) সভাপতি সাংবাদিক এম জিয়াবুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জিএম রুকুনউদ্দিন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার আওরঙ্গজেব চৌধুরী তারেক, সহকারী শিক্ষক সুচিত্রা চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার, সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ও সহকারী শিক্ষক মিশোরী জন্নাত মিশু প্রমুখ।
গতকাল সকালে কার্যক্রমের শুরুতে খুদে চিকিৎসকরা বেশ উৎফুল্ল পরিবেশে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের বারান্দায় খুদে চিকিৎসক সানসেরিন সরওয়ার নিরব চেয়ারে বসে রোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করছেন।
চিকিৎসক হাসনাত বিন মাহমুদা রোগীদের ওজন মাপছে, দুইজন চিকিৎসক তাসফিয়া সুলতানা ও দিলরুবা সুলতানা রোগীর দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছেন।
খুদে চিকিৎসক ইসরাত ফাইজা বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে রোগীদের (কোমলমতি শিক্ষার্থীদের) স্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতা বিষয়ে নানাবিধ তথা শেখাচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি।
এভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে রোগীর কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে তা সনাক্ত করলে সঙ্গে সঙ্গেই তা রোগীকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল বিদ্যালয়ের তৃতীয় চর্তুথ ও পঞ্চম শ্রেণীর ১৬ জন রোগীর (শিক্ষার্থীর) চিকিৎসা দিয়েছেন খুদে চিকিৎসক টিম।
এসময় তিনজনের হালকা কাশি ও সর্দি লেগে থাকার বিষয়টি সনাক্ত করা হয়েছে। পরে চিকিৎসক টিম তিনজনের শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবহিত করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শাহরিয়ার আওরঙ্গজেব চৌধুরী তারেক বলেন, খুদে চিকিৎসক টিম কতৃক রোগী সনাক্ত হবার পর বিষয়টি অভিভাবকদের ঢেকে নিয়ে জানানো হয়েছে। ওই তিনজন রোগীকে (শিক্ষার্থীদের) চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে সেবা নিতে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, খুদে চিকিৎসকদের মাধ্যমে রোগ জীবাণু সম্পর্কে ধারণা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাতে-কলমে শিক্ষা পাচ্ছে শিশুরা। শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে সরকারের এই কার্যক্রম নিসন্দেহে একটি ভালো উদোগ।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে ৯ জন ক্ষুদে চিকিৎসক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের ক্ষুদে চিকিৎসক টিমের সদস্য হাসনাত বিন মাহমুদা, আবিদা সুলতানা রিনি, সানসেরিন সরওয়ার নিরব, তাসফিয়া সুলতানা, দিলরুবা সুলতানা, ইসরাত ফাইজা, তাসফিয়া, মোহাম্মদ তাওসিফ, প্রিয়ামনি, সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, আমরা ‘যখন অ্যাপ্রোন গায়ে দিই, তখন আমাদেরকে ডাক্তারের মতো লাগে। আমরা শিক্ষার্থীদের অসুখ (রোগ), সম্পর্কে এবং পোষাক পরিধানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সহপাঠি ও ছোটদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিই।
চিকিৎসার শুরুতে রোগীর শারীরিক অবস্থা, ওজন ও উচ্চতা মাপি, দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা দেখি। এসব তথ্য খাতায় লিখে কার শাররীক অবস্থা কী তা প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিই। এরপর তিনি উপরোক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি সাংবাদিক এম জিয়াবুল হক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুইশো। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ক্লাস থেকে তিনজন করে ৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুদে চিকিৎসক টিম গঠন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবার উপকরণ হিসেবে চিকিৎসকদের ড্রেস ( অ্যাপ্রোন), ওজন মাপার মিটার, উচ্চতা মাপার স্কেল ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট) বিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। গতকাল তাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম দেখে ভালো লাগলো।
চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্যসচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ২০১১ সালে সারা দেশে বিদ্যালয়গুলোতে চালু করা হয় খুদে চিকিৎসক কার্যক্রম।
এরই আলোকে চকরিয়া উপজেলার ১৪১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গঠন করা হয়েছে খুদে চিকিৎসক টিম। মুলত সরকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, আমি একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুদে চিকিৎসক টিমের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। এই কর্মসুচির মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের
মাঝে স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা বিষয়ে অনেক কিছু শিখছেন।
এরই অংশ হিসেবে শিশু শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরির্চযা, কৃমি নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস ক্যাম্পেইন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন খুদে চিকিৎসক টিম।