কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্বামী গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলার বাদী স্ত্রী হাসিনা বেগম এবং তার দুই ছেলে প্রতিপক্ষের সাজানো মামলায় বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে। এ অবস্থায় নিরপরাধ মা ও দুই ছেলের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসুচি অনুষ্টিত হয়।
মানববন্ধনে নিহতের বড় ছেলে মোহাম্মদ আবু বলেন, সম্প্রতি চকরিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড করাইয়াঘোনা এলাকায় মুরগি ঘরে ঢুকায় মেরে ফেলার প্রতিবাদ করায় আমার বাবা গিয়াস উদ্দিনকে (৪৫) পিটিয়ে হত্যা করে বড় চাচা ও তার ছেলে।
এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আমার মাতা হাসিনা বেগম। ঘটনার দিন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারী আসামিদের সঙ্গে আমার ভাই (নিহতের ছেলে) মো. নোমানকে (২৩) আটক করে।
তিনি দাবি করেন, আমার মাতা বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা রুজু করার একদিন পর প্রতিপক্ষ (হত্যা মামলার আসামি) শাহাব উদ্দিনের স্ত্রী নুর আয়েশা বেগম বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় উল্টো একটি মারামারির মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আমার ভাই নোমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
একইভাবে নুর আয়েশা বেগমের মারামারি মামলার আসামি হিসেবে আমার মা (হত্যা মামলার বাদি) হাসিনা বেগম গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন জানান। এসময় আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠনোর নির্দেশ দেন।
নিহতের ছেলে মোহাম্মদ আবু মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আমার মা বাদি হয়ে রুজু করা হত্যা মামলাটি ইতোমধ্যে আপোষ করতে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে আসামিপক্ষের লোকজন।
এমনকি তাদের মামলায় আমার মা ও চার বছর বয়সী শিশুসহ ছোট দুই ভাই বর্তমানে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাবাকে হত্যার পর মা ও দুই ভাই জেলহাজতে। বাড়িতে আমি আর ছোট বোন ছাড়া কেউ নেই। আসামীপক্ষের লোকজন এখন আমাদেরকে বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে জানমালের নিরাপত্তা চাই। আমার মা ও দুই ভাইয়ের মুক্তি চাই।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, মুরগি মেরে ফেলার ঘটনা নিয়ে দুই পরিবার সদস্যদের মাঝে সংর্ঘষ হয়েছে। সেখানে একপক্ষের আঘাতে গিয়াস উদ্দিন নামের একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একই ঘটনায় শাহাবউদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে ছুরি দিয়ে জখম করা হয়। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নোমানকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে দুইটি মামলায় নিরপরাধ কেউ আসামি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে।
গতকাল উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে উপস্থিত হন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। এসময় তিনি উপস্থিত জনতাকে শান্ত থাকার জন্য আহবান জানান।
তিনি এসময় চার বছরের শিশু সন্তানসহ জেলহাজতে যাওয়া হত্যা মামলার বাদীনির জামিনের বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।