চাইলেই কি ডলারের আধিপত্য ভাঙা সম্ভব? করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে দুনিয়াজুড়ে ডলার সঙ্কটে আছে বাংলাদেশসহ অনেকেই। ফলে ডলারের আধিপত্য থেকে মুক্তি চাইছে অনেক দেশ।
ডলারের অপ্রতুলতার কারণে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের একাংশও ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে চাইনিজ মুদ্রাকে ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
চায়নিজ মুদ্রা কি ডলারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে? চলমান বিশ্বব্যবস্থাকে আমলে নিলে এক কথায় উত্তর হচ্ছে পরাবে না। কোনো দেশের মুদ্রা বৈশ্বিক মুদ্রায় পরিণত হওয়ার জন্য প্রথমেই দেশটির ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট মুক্ত থাকতে হবে।
এই ধরনের অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি মুক্ত থাকা মানে হচ্ছে : দেশটিতে যে কেউ বিনা দ্বিধায় বিনিয়োগ নিয়ে যেতে পারবে। আবার সেখান থেকে তা প্রত্যাহারও করতে পারবে। ওই বিধানটি বিদেশীদের পাশাপাশি চীনা নাগরিকদের জন্যও প্রযোজ্য হতে হবে। কিন্তু, চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোতে এখনও ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি খোলা নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমাদের মতো তাদের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি মুক্ত নয় কেন?
চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর আশঙ্কা, তাদের ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট মুক্ত থাকলে সেদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পুঁজি পশ্চিমা দেশগুলোতে অবাধে স্থানান্তর করবে। এতে সঙ্কটে পড়তে পারে সেখানকার অর্থনীতি।
এর পরের প্রশ্ন হচ্ছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মাতব্বর হওয়ার জন্য ওই দেশগুলো কেন ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট মুক্ত করে না? এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হলে হিম্মত লাগে। সেটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার হিম্মত। উত্তর আমেরিকা ও ইইরোপীয় দেশগুলো বহি:বিশ্বে তাদের একাধিপত্য বাস্তবায়ন করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপই নিক না কেন, নিজ দেশে কিন্তু বুর্জোয়া গণতন্ত্রের বিধিবিধানগুলো অনুসরণ করে।
সাধারণভাবে যদি বাংলাদেশি কাউকে অপশন দেওয়া হয় তিনি যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীনে যেতে চান? এর বিপরীতে সবার উত্তর হবে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এর অর্থ হচ্ছে, আপনি নিজ দেশের সব সম্পদ সেখানে নিয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান। আবার সেখান থেকে প্রয়োজনে সম্পদ এদেশে নিয়েও আসবেন। এই ধরনটি চীনে প্রযোজ্য নয়।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মাতব্বরী করতে হলে উপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলো চীনকে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, নিজের জায়গায় ডলার থাকবে।
জামীর রাসেল
০৩.০৮.২০২২