আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে ইংরেজের অত্যাচার, নিপীড়ন, জেল, জুলুম আর কালাপানি তথা ‘সেলুলার’ জেলের কথা।
ভারত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে এবং বঙ্গোপসাগরের পুব-দক্ষিণাংশে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান। অক্ষরেখার উত্তরে আন্দামান আর দক্ষিণে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান।
ঝড় জলোচ্ছ্বাস আর সুনামির ধকল সহ্য করেই এখানকার মানুষের বসবাস। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। কলকাতা হাইকোর্ট হতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পুবে আন্দামান সাগর আর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।
আন্দামান ও নিকোবর হচ্ছে মালয় ভাষার দুটি শব্দ। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি আন্দামান সাগরের ব্যারেন দ্বীপে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগর হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর। ত্রিভুজাকৃতির বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলংকা, উত্তরে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্বদিকে মায়ানমার ও থাইল্যান্ড।
আন্দামানের প্রায় ১১০০ কিলোমিটার সোজা উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ককসবাজার জেলার টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। নিকোবরের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ইন্দিরা পয়েন্ট। এখানে ১৯৭২ সালে একটি লাইট হাউজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ইন্দিরা পয়েন্ট নামক গ্রামে ২১ কিলোমিটার পাকা রাস্তা আছে। নিকোবরের সর্ব দক্ষিণের গ্রাম ইন্দিরা পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৬৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশের সাবাং জেলার সীমান্ত এলাকা। ২০০৪সালের সুনামিতে ইন্দিরা পয়েন্টের বহু মানুষ মারা গিয়েছিল।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ছোটবড় ৫৭২টি দ্বীপ রয়েছে, তার মধ্যে কেবল ৩৭টিতে জনবসতি রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মিলিত আয়তন ৮২৪৯ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৩,৮০,৫২০জন, জনসংখ্যার ৬৯.৪৪ শতাংশ হিন্দু, ২১.৭০ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং ৮.৫১ শতাংশ মুসলমান ধর্মের অনুসারী।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অফিসিয়াল ভাষা হিন্দি ও ইংরেজি। তবে অধিবাসীদের মধ্যে বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু,মালয়ালম, নিকোবরিজ ইত্যাদি আরও কিছু ভাষা চালু আছে।
মায়ানমারের কারেন জাতিসহ অনেক মানুষ উত্তর আন্দামানের মায়াবান্দার ও দিগলিপুরসহ বিভিন্ন দ্বীপে বসবাস করে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগের পরে পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিমবঙ্গে যে সকল রিফিউজি গিয়েছিল তাদের মধ্যে অনেক অসহায়কে ভারত সরকার বিভিন্ন সময়ে আন্দামান ও নিকোবরে এনে পুনর্বাসিত করে।
বাংলাদেশের বহু বাঙালির বংশধর এখানে বসবাস করে। রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার ছাড়াও হ্যাভলক দ্বীপে তাদের আধিক্য নজরে পড়ে। মূল ভূখণ্ড থেকে পরিবহনের খরচ বেশির কারণে জিনিসপত্রের দাম এখানে স্বভাবতই বেশি।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার। ভারতের ১০০ স্মার্ট সিটির মধ্যে পোর্ট ব্লেয়ার একটি।
পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কলকাতার দূরত্ব-১২৫৫ কিলোমিটার, বিশাখাপত্তমের দূরত্ব-১২০০ কিলোমিটার, চেন্নাইর দূরত্ব-১১৯০ কিলোমিটার। আন্দামানের উত্তর পয়েন্ট থেকে হুগলি নদীর মোহনার দূরত্ব-৯০১ কিলোমিটার। বিমানে পোর্ট ব্লেয়ারের বীর সাভারকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই ঘন্টায় চেন্নাই ও কলকাতা পৌঁছানো গেলেও স্টিমারে কলকাতা ও বিশাখাপত্তমে পৌঁছাতে ৪ থেকে ৫দিন লেগে যায়। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মোট তিনটি জেলা:
১.উত্তর ও মধ্য আন্দামান(জনসংখ্যা-১,০৫,৫৯৭)-সদর দপ্তর মায়াবান্দার।
২.দক্ষিণ আন্দামান জেলা (জনসংখ্যা-২,৩৮,১৪২)-সদর দপ্তর পোর্ট ব্লেয়ার,
৩.নিকোবর জেলা(জনসংখ্যা-৩৬,৮৪২)-সদর দপ্তর কার নিকোবর।
গ্রেট আন্দামানিজ, সেন্টিনেলিজ, অনেজ, জারওয়া প্রভৃতি আদিবাসির বাস এসকল দ্বীপপুঞ্জে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত সেন্টিনেল দ্বীপে সেন্টিনেলিজ আদিবাসীর বাস রয়েছে যাদের কাছে সভ্যতার আলো পৌছানো সম্ভব হয়নি এবং যাদের সাথে বাহিরে থেকে আসা কাউকে সরকারীভাবে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়নি। পৃথিবীর মধ্যে এই দ্বীপবাসী সেন্টিনেলিজরাই পৃথকভাবে বসবাস করতে চায়, আধুনিক সভ্যতার কোন ছোঁয়া তাদের কাছে কাম্য নয়। তবে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে গবেষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমোদন আছে। সেন্টিনেলিজরা বাইরের কাউকে সহ্য করতে পারে না। কারো থেকে তারা সাহায্যও চায় না। দ্বীপে হেলিকপ্টার দেখে তারা বিরক্ত হয় এবং তারা তীর ছুড়ে মারে। এসকল আদিবাসী ৬০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে মাইগ্রেট করে আসা লোক।
আন্দামান-নিকোবরের লোকজন ৩০ হাজার বছর আগে তাদের থেকে পৃথক হয়ে এসে বসবাস করতে থাকে বলে নৃবিজ্ঞানীদের অভিমত। সেন্টিনেলিজরা দ্বীপে সকলেই নগ্ন থাকে।
তাদের আক্রমনে বাইরে থেকে আসা মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। লোহা দিয়ে তীর ধনুকের মত ধারালো অস্ত্র তৈরি করে থাকে। তারা সাগরের মাছ ও বনের পশু শিকার করে। কলা ইত্যাদিসহ ফল এবং মধু তাদের প্রধান খাবার।
রাজধানী শহর পোর্ট ব্লেয়ার থেকে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে আদিবাসী সেন্টিনেলিজদের আবাসভূমি উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের অবস্থান। উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের আয়তন ৫৯.৬৭বর্গ কিলোমিটার। সেখানে জনগণনা করা সম্ভব হয় না। তবে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে লোক সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০০জন হতে পারে বলে অনুমান।
সুনামির পরেও তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিল। উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ থেকে দক্ষিণ সেন্টিনেল দ্বীপ প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। দক্ষিণ সেন্টিনেল দ্বীপের আয়তন ১.৬১ বর্গ কি মি। সে দ্বীপে কোন মানুষের তথা আদিবাসীর বসবাস নাই।
সমগ্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে চাষের অধীনে জমির পরিমাণ ১,২০,০০০ একর আছে। বনভূমি ৭০৯৮ বর্গকিলোমিটার। বনে প্রচুর কাঠ আছে। আন্দামানে প্রধান ফসল ধান। নিকোবরে উৎপাদন হয় নারিকেল ও সুপারি। তাছাড়া শাকসবজি উৎপাদন হয়।
আম, আনারস,কলা,পেঁপে,কমলা ও মসলাদি উৎপাদন হয়। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে। তবে প্রধান আয় হয় টুরিজমের মাধ্যমে। আন্দামান ও নিকোবরের বহু মানুষ সাগরের মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। স্থানীয় নির্মাণ চাহিদা পূরণের উদ্দেশে ১৮৮৩ সালে এখানকার প্রথম কলোনী চাটহাম দ্বীপে প্রতিষ্ঠিত সরকারী করাত কলটি এশিয়ার মধ্যে প্রাচীন ও বৃহত্তম । হাতি এখানে গাছের গুড়ি টেনে থাকে। একটি ১০০মিটার ব্রিজ দ্বারা পোর্ট ব্লেয়ারের সাথে চাটহাম দ্বীপ সংযুক্ত।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী শহর পোর্ট ব্লয়ারের অবস্থান দক্ষিণ আন্দামানে। ১৭৮৯ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি আন্দামানের চাটহাম দ্বীপে একটি নৌঘাটি এবং কয়েদীদের কলোনী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
মুম্বাই মেরিনের লে. আর্চিবল্ড ব্লেয়ারকে জরিপের উদ্দেশে আন্দামানে পাঠানো হয়। তার জাহাজ এইচএমএস ভাইপার দুর্ঘটনাবশত ডুবে যায়। যেখানে ডুবেছিল সে স্থানটি ঐ জাহাজের নামে নামকরণ করা হয় ভাইপার দ্বীপ। নৌঘাটির নাম রাখা হয় তাঁর নামে পোর্ট ব্লেয়ার।
দুই বছর পরে আবার আসেন অ্যাডমিরাল স্যার উইলিয়াম কর্নওয়ালিশ। তিনি এসে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ঘাটি আরও উত্তর-পুবে সরিয়ে নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ারের পরিবর্তে নামকরণ করেন নিজ নামে পোর্ট কর্নওয়ালিশ। কিন্তু ম্যালেরিয়ার প্রকোপে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারনে সেখানে ১৭৯৬সালে কলোনীর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৮৫৫সালে আবার পরিকল্পনা করা হয় কলোনী স্থাপনের। ১৮৫৭ সালে তার নির্মাণ শুরু হয়। সিপাহী বিদ্রোহের রাজনৈতিক আসামীদের এনে ১৮৫৮সালে পোর্ট ব্লেয়ারের পশ্চিমে ভাইপার দ্বীপে কলোনীর জায়গা নির্ধারণ করা হয়।
সিঙ্গাপুর থেকে ৭৭৩ জন আসামী এবং কলকাতা থেকে ২০০ সিপাহী বিদ্রোহীকে এখানে নিয়ে আসা হয়। ১৯০৬ সালে পোর্ট ব্লেয়ারে সেলুলার জেল নির্মান করা হয়। নির্মাণ কাজে ইট আনা হয় বার্মা থেকে।
কেন্দ্রীয় টাওয়ারসহ সাতটি উইংয়ের তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে ৬৯৬ সেলে কয়েদীরা স্থানান্তরিত হয়। প্রশাসনিক সদর থাকে রস আইল্যান্ডেই। আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রধান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালের ২৯শে ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পোর্ট ব্লেয়ারে অবস্থান করেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রধান ৩০শে ডিসেম্বর এখানকার জিমখানা ক্লাব মাঠে ভারতের স্বাধীনতার পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর পোর্ট ব্লেয়ারে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সদরদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেলুলার জেলখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেলুলার জেলখানা এখন মিউজিয়াম। আর সেলুলার জেলখানায় দীর্ঘদিন জেলে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনায়ক দামোদর সাভারকারের নামে পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয় বীর সাভারকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আর রস আইল্যান্ডের নাম হয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আইল্যান্ড।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির ন্যায়, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও একই শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, এখানে ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এখানকার উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষা, কেন্দ্রীয় মধ্য শিক্ষা পর্ষদ (সি.বি.এস.ই) দ্বারা অনুমোদিত।
মহাবিদ্যালয়গুলি সাধারণত পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু পলিটেকনিক মহাবিদ্যালয় রয়েছে যেগুলি নিউ দিল্লির দ্বারা অনুমোদিত। এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে শিক্ষার্থীরা এখানে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইন বিষয়ে পেশাগত শিক্ষা অর্জন করতে পারে না। এখানে এই প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নানা স্তরের প্রায় চার শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এখানকার শিক্ষার হার ৮৬.৬ শতাংশ।
আন্দামান ও নিকোবরে অবস্থিত প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
1.Regional Medical Research Institute,Port Blair
2.Colonel Degree College for Women,Chural Kalan
3.Jawaharlal Nehru Rajkeeya Mahavidyalaya,Port Blair
4.Government Teachers Training Institute,Port Blair
5.Central Agricultural Research Institute,Port Blair
6.Mahatma Gandhi Government College,Mayabunder
7.Dr. B R Ambedkar Institute of Technology,Port Blair
8.Tagore Government College of Education,Port Blair.
আন্দামানে শের আলী খান আফ্রিদির হাতে ভারতের বড়লাট লর্ড মেয়ো নিহত:
ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ছিলেন রিচার্ড সাউথওয়েল বুর্ক, আর্ল অব মেয়ো (১৮২২-১৮৭২)। তিনি লর্ড মেয়ো নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ব্রিটিশ কনজারবেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন তিনি। ১৮৬৮ সালে তিনি ভারতে ভাইসরয় (Vice roy)ও গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন। ল্যাটিন ভাষায় ভাইস(Vice)মানে পরিবর্তে আর ফরাসী ভাষায় রয়( roy)মানে সম্রাট। ভাইসরয় পদবির মানে হচ্ছে ব্রিটেনের রাণির প্রতিনিধি। ব্রিটেনের রাণী ও প্রধানমন্ত্রীর পরে ভারতে নিয়োজিত ভাইসরয় হচ্ছেন তাদের প্রশাসনের তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। লর্ড মেয়ো ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন খুবই উদ্যমী মানুষ।
লর্ড মেয়ো ১৮৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারি কলকাতা থেকে সস্ত্রীক বার্মা ভ্রমণে রওয়ানা হন। বার্মা ব্রিটেনের কলোনী। বার্মা থেকে ফেরার পথে তিনি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে উড়িষ্যা হয়ে আবার কলকাতায় ফিরে আসবেন এমনই ছিল তাঁর ভ্রমণসূচিতে। রণতরী গ্লাসগো ছাড়াও তাঁর অন্যান্য ভ্রমণ সঙ্গীদের নিয়ে ‘ঢাকা’ নামে একটি স্টিমারও সাথে যাচ্ছে।
বার্মা ভ্রমণ শেষে ৮ই ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় বড়লাটের রণতরী আন্দামানের হোপ টাউনের জেটির কাছে এসে নোঙর ফেললো।
তোপধ্বনির মাধ্যমে বড়লাটকে স্বাগত জানানো হল। হোপ টাউন জেটিতে জাহাজ ভিড়তেই আন্দামানের সুপারিনটেনডেন্ট জাহাজে উঠে বড়লাটকে স্বাগত জানালেন। একটু ফারাক হয়ে বড়লাটের ব্যক্তিগত সচিব আন্দামানের সুপারিনটেনডেন্টের কাছে বড়লাটের জন্য গৃহিত নিরাপত্তার পরিস্থিতি জানতে চাইলেন।
মাত্র মাস চারেক আগে কলকাতায় ওয়াহাবী আন্দোলনকারী পাঞ্জাবের আবদুল্লাহর দ্বারা ছুরিকাঘাতে প্রধান বিচারপতি নিহত হয়েছেন। উল্লেখ, কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি স্যার জন প্যাক্সটন নরম্যান ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখ টাউন হল থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য নিজের গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময় ওয়াহাবী আন্দোলনকারী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী পাঞ্জাবের আবদুল্লাহ তাঁর তলপেটে ও ঘাড়ে ছুরি দ্বারা আঘাত করেন।
পরদিন প্রধান বিচারপতি স্যার জন প্যাক্সটন নরম্যান (১৮১৯-১৯৭১)মারা যান। ওয়াহাবী আন্দোলনকারীদের বিচার করে কঠিন শাস্তি দিতেন বিধায় প্রধান বিচারপতি স্যার জন প্যাক্সটন নরম্যান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে খুবই ধিকৃত ছিলেন। প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশে পাঞ্জাব থেকে কলকাতায় এসে আবদুল্লাহ সুযোগের সন্ধানে ছিলেন।
সুযোগ সন্ধানে আবদুল্লাহ দুই বছর ধরে কলকাতার একটি মসজিদে অবস্থান করছিলেন। পরে বিচারে তার ফাঁসির রায় হয় ও বাস্তবায়ন করা হয়।
আন্দামানের সুপারিনটেনডেন্ট বড়লাটের সচিবকে জানালেন, কয়েদিরা এখানে যে যা কাজ করে থাকে তাই তারা করতে থাকবে। বড়লাট যাতে সেটেলমেন্টের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারেন, দেখতে পারেন সেটেলারদের জীবন এখানে কীভাবে কাটে সে কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে কয়েদিদেরকে তাঁর কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না। বন্দুকধারী পুলিশ ছাড়াও স্থানীয় রক্ষীরাও আছে যারা বড়লাটকে ঘিরে রাখবে। নিরাপত্তার সবকিছু শুনে লর্ড মেয়ো বললেন, চিন্তা নাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই আছে। তিনি আরও বললেন,‘কলকাতায় প্রধান বিচারপতির বেলায় যা ঘটেছে এমনটা অবশ্য হঠাৎ করেই ঘটে যায়’।
সকালের নাস্তা করে তিনি বেরিয়ে পড়লেন রস আইল্যান্ডের উদ্দেশে। জায়গাটি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বেশি দূরে নয়, মাত্র তিন কিলোমিটার পুবে। সার্ভেয়ার ডেনিয়েল রসের নামে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছিল। এই রস দ্বীপে এখানকার প্রশাসনিক সদর দপ্তর স্থাপন করা আছে। চিফ কমিশনারের প্রধান বাংলো এখানে একটু উঁচু স্থানে নির্মিত হয়েছে। চাটহাম দ্বীপ ও ভাইপার দ্বীপে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ২০০বিদ্রোহীকে এনে ১৮৫৮সালে এসব দ্বীপে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
১৮৫৮সালে ৭৭৩জন কয়েদী সিঙ্গাপুর থেকে পোর্ট ব্লেয়ারে আনা হয়েছিল। এই চাটহাম দ্বীপেই প্রথম কলোনী তৈরি করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ৭০০০জন কয়েদীকে এনে কলোনীতে অভিবাসন করা হয়েছে। কয়েদীরা অবশ্য দ্বীপে খোলামেলা ভাবেই থাকে।
অনুরূপভাবে ইংল্যান্ড থেকে অপরাধীদের নিয়ে এভাবেই অষ্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করা হয়েছিল।
১৯০৬সালে পোর্ট ব্লেয়ারে সেলুলার জেলখানা (কয়েদীর প্রতিটি কক্ষকে সেল বলা হত) নির্মাণ শেষে চালু হওয়ার পর সকল কয়েদীদের এনে সেলুলার জেলেখানায় রাখা হয়।
দিনের প্রথমার্ধ বড়লাটের কেটে গেল রস দ্বীপেই। তিন ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে বড়লাট সপরিষদ জাহাজে ফিরে এসে সবার সাথে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করেন। তারপর গেলেন ভাইপার দ্বীপে। ১৮৬৮ সালে এখান থেকে ২৩৮ জন কয়েদী পলায়নের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সকলেই আবার ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে একজন আত্মহত্যা করেছিল।
অবশিষ্টদের মধ্যে ৮৭ জনের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান পোর্ট ব্লেয়ার থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমের এই ভাইপার দ্বীপে ভ্রমণ ও পরিদর্শন করে লর্ড মেয়ো দলবলসহ আবার ফিরে আসেন গ্লাসগো জাহাজে।
ভাইপার দ্বীপ পরিদর্শন করে সাথে যাওয়া অনেকেই ক্লান্ত হলেও লর্ড মেয়ো আবারও মাউন্ট হ্যারিয়েট এলাকা দেখতে বেরিয়ে পড়লেন। সেখানে একটি স্যানিটরিয়াম নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের সারিয়ে তোলার উদ্দেশে স্থাপনের জন্য এটি কেমন উপযোগী তা লর্ড মেয়ো নিজে দেখতে চান। বিকাল পাঁচটায় বেরিয়ে পড়েন। লঞ্চ থেকে নেমে আবার দেড় কিলোমিটার পায়ে হাঁটার রাস্তা।
একটি খচ্চরের পিঠে চড়ে তিনি কিছুক্ষণ চলেন। তারপর নেমে অন্য কাউকে খচ্চরের পিঠে চড়তে বলেন। তিনি নিজে হাঁটতে থাকেন। প্রায় ১১০০ফুট উঁচুতে সে স্থান। সেখান থেকে সানসেট চমৎকার উপভোগ করা যায়। তিনি সেটি উপভোগ করতে চান। মাউন্ট হ্যারিয়েট স্থানটি ব্রিটিশ আর্মি অফিসার ও সুপারিনটেনডেন্ট রবার্ট ক্রিস্টোফার টিটলারের স্ত্রী হ্যারিয়েট সি টিটলারের নামে নামকরণ হয়েছিল।
এই মহিলার ইচ্ছায় ১৮৬২-১৮৬৪সালের দিকে মনোরম এই স্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছিল।
লর্ড মেয়ো সপরিষদ কাঁচা রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন মাউন্ট হ্যারিয়েটের দিকে। ওদিকে তাদের পাশাপাশি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে একজন কয়েদী যার হাতে রয়েছে রাতে ধার দেওয়া একটি বড় ছোরা।
তার লক্ষ্য বড়লাট লর্ড মেয়ো। প্রস্তুতি ছিল পরের দিনের জন্য কিন্তু লর্ড মেয়ো আজকের বিকেলে ভ্রমণে আসায় সেও প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। কয়েদীর নাম শের আলী খান আফ্রিদি।
তার বন্দি নম্বর-১৫৫৭। তিনি খাইবার পাসের নিকট জামরুদ গ্রামের মানুষ। পুলিশের গুপ্তচর সন্দেহে যুবক হায়দর আলীকে সে হত্যা করেছিল। তার সন্দেহ ছিল হায়দর আলী ওহাবী নেতাদের পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছিল। শের আলীকে পেশোয়ার থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল।
পরে কলকাতা হাইকোর্টে আপীল করার পরে তার যাবজ্জীবন নির্বাসন দন্ড হলে উপস্থিত হন আন্দামানে। আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারের হোপ টাউনের কাছে পানিঘাটায় বন্দি ছিলেন শের আলী খান আফ্রিদি।
এখানে এসে তিনি একদম শান্ত হয়ে যান। কয়েদীদের মধ্যে ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের হলেই কেবল তাকে নাপিতের দায়িত্বে দেওয়া হয়। শের আলী খান ছিলেন নাপিত। একাজ করে তিনি যা আয় করেছিলেন তা আগের দিন বন্ধু কয়েদীদের আপ্যায়নে ব্যয় করে শেষ করেন।
সকলের কাছে বিশ্বাসভাজন শের আলী তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজটি করার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন। বড়লাটকে পাওয়া কঠিন কিন্তু ঘটনাক্রমে সেটিই আজ তার নাগালের মধ্যে এসেছে যা বাস্তবায়ন করার জন্য সে উদগ্রীব। কিন্তু পুলিশসহ অন্যান্য লোকজন এমনভাবে তাঁকে ঘিরে রাখে যে কোন সুযোগই সৃষ্টি হয় না।
মাউন্ট হ্যারিয়েটে উঠে সানসেট উপভোগ করে ফিরে চলে সবাই। জেটির কাছে এসে লোকজন একটু ফারাক হয়। শের আলী খান এখন বড়লাটের কোট দেখতে পান। এই সুযোগে চিতা বাঘের মত লাফিয়ে এসে তার সাথে থাকা ধারালো ছোরা দ্বারা পর পর দু’বার বড়লাটের পিঠে আঘাত হানেন।
ইত্যবসরে পুলিশ শের আলীকে ধরে মারতে শুরু করে। কয়েকজন বড়লাটকে তুলে ধরেন। একজন অফিসার শের আলীকে না মেরে আটকে রাখতে নির্দেশ দেন। বড়লাটকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর জাহাজে।
তাঁর স্ত্রীসহ সকলেই ডিনারের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। ডাক্তার দেখে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শের আলী খানকে জাহাজে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার সাথে কারা আছে এবং কার নির্দেশে সে এমন কাজ করেছে। তিনি বলেন যে আল্লাহর নির্দেশে তিনি একাজ করেছেন।
তিনি বলেন যে, ‘খুদা নে হুকুম দিয়া। মেরা শরীক কোই আদমি নেহি। মেরা শরীক খুদা হ্যায়।’ অর্থাৎ আমাকে একাজ করার জন্য খুদা হুকুম দিয়েছেন। আমার শরীক অন্য কেউ নাই, আমার শরীক হচ্ছেন খুদা। সরকার শের আলী খানকে শহীদ কিংবা হিরো বানাতে চায়নি। আর বড়লাট মেয়োর মৃত্যুর ঘটনাকে বলতে গেলে অনেকটা চেপেই যাওয়া হয়। পরবর্তী বড় লাটের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্যার জন স্ট্র্যাসিকে। পরে লর্ড মেয়োর মৃতদেহ আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে নেয়ে গিয়ে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
আর বিচারে শের আলীর আবার ফাঁসির আদেশ হয়। ১৮৭৩ সালের ১১ই মার্চ ভাইপার দ্বীপে শের আলী খানের ফাঁসি দেওয়া হয়।
সমগ্র ভারতবর্ষে একজন মাত্র বড়লাট বিপ্লবীদের দ্বারা নিহত হয়েছেন আর সে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন সীমান্ত প্রদেশের খাইবার পাসের শের আলী খান আফ্রিদি। তাঁকে আজ চেনেন ভারতের ক’জন?
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার কিশোরযোদ্ধা ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮)চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলক্রমে দুজন ব্রিটিশ মহিলাকে হত্যা করেছিলেন।
বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস ক্ষুদিরাম বসুর অবদানকে স্মরণ করে রচনা ও সুরারোপ করেন সেই বিখ্যাত গান:
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী
আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী।
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ধারে মা গো,
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম
আর এক ইংল্যান্ড বাসী,
আমি বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম
আর এক ইংল্যান্ড বাসী,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।।
শনিবার বেলা দশটার পরে
জর্জকোর্টে তে লোক না ধরে মা গো,
শনিবার বেলা দশটার পরে
জর্জকোর্টে তে লোক না ধরে মাগো,
হলো অভিরামের দ্বীপজ্বালান মা
খুদিরামের ফাঁসি,
হল অভিরামের দ্বীপজ্বালান মা
খুদিরামের ফাঁসি,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।।
বারো লক্ষ তেত্রিশ কোটি
রইল মা তোর বেটা বেটি মা গো,
বারো লক্ষ তেত্রিশ কোটি
রইল মা তোর বেটা বেটি মাগো,
তাদের নিয়ে ঘর করিস মা
বৌদের করিস দাসী,
ও মা তাদের নিয়ে ঘর করিস মা
বৌদের করিস দাসী,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।।
দশ মাস দশ দিন পরে
জন্ম নিব মাসীর ঘরে মা গো,
দশ মাস দশ দিন পরে
জন্ম নিব মাসীর ঘরে মাগো,
তখন যদিনা চিনতে পারিস
দেখবি গলায় ফাঁসি,
ও মা তখন যদিনা চিনতে পারিস
দেখবি গলায় ফাঁসি,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী
আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী।
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।।
পীয়ুষ বসু পরিচালিত ও ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র সুভাষচন্দ্র বসুতে ব্যবহৃত ঐ গানে লতা মুঙ্গেশকার কণ্ঠ দিলে গানটি দেশব্যাপী অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। দেশপ্রেমের মানদন্ডে ত্যাগী ক্ষুদিরাম বসুর অবস্থান অনেক উঁচুতে এতে সন্দেহ নাই। দেশবাসী ক্ষুদিরাম বসুর ত্যাগ ও অবদানের প্রতি সকলেই কৃতজ্ঞ। ভারতের মধ্যে একজন বড়লাটকে হত্যা করেছেন শের আলী খান আফ্রিদি এবং একজন প্রধান বিচারপতিকে হত্যা করেছেন পাঞ্জাবের আবদুল্লাহ। এই দুই বিপ্লবী বীরের অবদান নিঃসন্দেহে তুলনাহীন। অথচ আজ তাঁদের কথা মনে রেখেছেন এদেশের কয়জন?
কৃষিবিদ জয়নাল হোসেন
লেখক ও গবেষক
০৯,০৫.২০২৩