সপ্তাহ খানেক ধরে শীত নেমেছে। এরমধ্যে টানা তিনদিনের ছুটি। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ। সবমিলিয়ে আনন্দভ্রমনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছিলেন চার লাখেরও বেশি পর্যটক।
করোনা পরবর্তী এবারই সর্বোচ্চ পর্যটক সমাগম। কিন্তু চাহিদার অতিরিক্ত এ চাপ সামলাতে পারেনি ছোট শহর কক্সবাজার। কোথাও ঠাঁই ছিলনা।
অবকাশে এসে থাকা-খাওয়া নিয়ে নানা বিডম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে পর্যটন শহর ছেড়ে যাচ্ছেন পর্যটকেরা। এতে ভিড়ও কমে এসেছে। তবে সব রাস্তাঘাটে যানবাহনের চাপে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় সৈকতের কলাতলী বীচে গিয়ে দেখা যায়, গত তিনদিনে পর্যটকের চাপ যেন একটু কমে এসেছে। তেমন ভিড় নেই। যারা সৈকতে নেমেছেন,তাঁরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। কেউ বীচ বােইক নিয়ে ঘুরছেন, কেউ সৈকতের নোনা জলে গোসল করে আনন্দে মেতে উঠছেন।
হঠাৎ করে সৈকতে ভিড় কমার কারণ কি এ প্রশ্নের জবাবে বীচ বাইক চালক সালাহ উদ্দিন (২৫)বলেন,বেড়াতে এসে এবার পর্যটকেরা নানাভাবে বিডম্বনায় পড়েছেন। খাবার-দাবার ও থাকতে গিয়ে চার-পাঁচ গুন অর্থ ঘুনতে হয়েছে।
রাজশাহীর পবা থেকে একটি বেসরকারি
প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবী সাজ্জাদ হোসেন সপরিবারে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার এসেছিলেন। তিনি জানান,‘ তিনদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু দুইদিনেই সব শেষ। পরে পুনরায় টাকা এনে খরচ করতে হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার শ্যামলী এলাকার ব্যবসায়ী সিয়াম আহমেদ বলেন,থাকা-খাওয়া যাতায়াত ও সবখানেই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রবণতা দেখা গেছে। এটি পর্যটন বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে।পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হবে।
শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী বীচ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতেই পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। এছাড়া কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ ধরে সৈকতের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যটেকরা ছড়িয়ে পড়েছিল। থাকা-খাওয়ার ভোগান্তির পাশাপাশি যানজটে নাখাল ছিল পর্যটকেরা।
গত বুধবার বিকেল থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজার আসা শুরু করেছিলেন। এবারের বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির তিন দিনে চার লাখেরও বেশি পর্যটক ছুটে এসেছেন বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার, ইনানী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের হোটেলগুলোতে তিন দিনের কক্ষ ভাড়া শেষ হওয়ার পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটের পর্যটকবাহী জাহাজের টিকিটও বেচাকেনা শেষ হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব টুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘কক্সবাজার শহর ও আশপাশের ৫শ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে দেড় লাখের বেশি পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। টানা তিন দিনের ছুটিতে আগে থেকেই বেশির ভাগ কক্ষ বুকিং ছিল। যারা বুকিং দিয়ে আসেনি তাঁরা বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। গতকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা,নানাভাবে সহযোগিতা এবং সেবা দিতে টুরিস্ট পুলিশ সচেষ্ট ছিল। সৈকতের পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে একাধিক টিম কাজ করছে।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান,‘পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে ।
ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাবক্ষনিক নজরদারি করা হচ্ছে।#