মাইনউদ্দিন শাহেদ
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথেই কক্সবাজারের রামু রাবার বাগান। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুপাশে টিলা জাতীয় এ পাহাড়ের সারি সারি রাবার গাছ যে কারও চোখ আটকে যায়। সবুজে ঘেরা এ বাগান পর্যটকদের বিমোহিত করে।এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও পছন্দ ও আকর্ষণের জায়গা ছিল। নানা স্মৃতি বিজড়িত এই রাবার বাগানে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে খুন হওয়ার ছয় মাস আগে ঘুরে গেছেন।
সেদিন ছিল ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন বাগানের রেস্ট হাউসের ড্রইনরুমে একটি সোফায় বসে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর সেদিনের স্মৃতি ধরে রাখতে বাগান কর্তৃপক্ষ সোফাটি সংরক্ষণ করে রেখেছেন। প্রায় সাড়ে ৪৬ বছর আগের সেই সোফাটি দেখতে স্থানীয় লোকজন ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটেকরা ভিড় করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে নেমেই বাগানের ভেতরে ইট বিছানো পথ ধরে একটু ঢুকলেই দৃষ্টিনন্দন রেস্ট হাউস।রেস্ট হাউসে ঢুকতেই ড্রইংরুমের এক কোণায় কাঁচের ভেতরে সোফাটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান,তাঁদের কাছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দুইবার বঙ্গবন্ধু বাগানে আসার তথ্য রয়েছে। তিনি বাগানে ঘুরেছেন এবং রেস্ট হাউসে রয়েছে তাঁর নানান স্মৃতি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু যে সোফায় বসেছিলেন কাঁচের ঘেরায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গোলাম কবির মেম্বার জানান, বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারে সফরের সময় বেশ কয়েকবার রামু রাবার বাগানে এসেছেন। তিনি সর্বশেষ ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিমানযোগে কক্সবাজার আসেন। সেদিন তিনি সৈকতে ঝাউগাছের চারা রোপণ করে সরাসরি রাবার বাগানে চলে আসেন।
গোলাম কবির বলেন, আগে রাবার বাগানের মাটিতে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত রাবারগুলো সংগ্রহ করা হতোনা।সেদিন বাগানে ঢুকে বিষয়টি পর্যবেক্ষন করেন বঙ্গবন্ধু এবং একটি গাছের গোড়া থেকে নিজের হাতে পরিত্যক্ত রাবার তুলে নেন।এ সময় তিনি রাবার শিল্পের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন। এরপর পাশের চৌফলদণ্ডী লবণ মাঠ পরিদর্শণে যান। সেদিনের রাবার বাগান পরির্শণ ও লবণ শিল্পের উন্নয়নে লবণচাষীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সংবাদটি পরের দিন ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হিসেবে ছাপা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সোফাটি ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ সোফাটি যত্ন করে সংরক্ষণ করায় এটি একটি ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
কক্সবাজার সদর ও রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বঙ্গবন্ধুর নানান স্মৃতি রয়েছে। রাবার বাগানের মতো সেসব স্মৃতিও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।