বান্দরবানের ৩০০ নং আসনে জাতীয় নির্বাচনে এই প্রথম নৌকা ও লাঙ্গল এই দুই প্রার্থীর লড়াই হবে। তবে কোন শক্ত প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং আবারও জয়ী হবেন বলে মনে করছেন জেলার মানুষ।
বান্দরবানের ৭টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ৩৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৩০০ নং আসন। এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ২৯ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪৪৬ ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৮৩ জন। এবার নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৮২টি। ৭২৭টি বুথের ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে দুর্গম এলাকার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলাসহ ১২টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনে কাজে ব্যবহার করা হবে হেলিকপ্টার।
বান্দরবান জেলার একমাত্র সংসদীয় আসনটি তিন দশক ধরে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাতে। পরপর ৬বার সংসদ সদস্য হয়েছেন বীর বাহাদুর উশৈসিং, যিনি দলের জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী। বান্দরবান ৩০০নং আসনে বীর বাহাদুর উশৈসিং ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০০১ সালে, ২০০৮ সালে, ২০১৪ সালে ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ষষ্ঠ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭ম বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এই প্রথম বান্দরবানে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন এ.টি.এম. শহীদুল ইসলাম। তিনি মূলত চিকিৎসক ও বীমা কর্মী হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় কাজ করে থাকেন। তার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির লামার সাংগঠনিক জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করা হলেও ভোটারদের কাছে তেমন পরিচিত নয়। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরও তিনি নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় তেমন মাঠে নামেননি।
নির্বাচনকে ঘিরে জেলা শহর, উপজেলা, ইউনিয়ন, অলিগলি, পাড়া মহল্লায় ছেয়ে গেছে নৌকা প্রতীকের পোস্টার। শহরজুড়ে চলছে নৌকা প্রার্থীর মাইকিং। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকা শ্লোগানে বের হচ্ছে মিছিল। নৌকার ভোট চেয়ে মাঠে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। গ্রাম কিংবা মহল্লায় চলছে উঠান বৈঠক। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে চাইছেন ভোট।
উপজেলাগুলোতে নির্বাচনের জনসভায় যোগ দিচ্ছেন নৌকার প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তবে অনেকটা নীরবই রয়েছে জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এটি এম শহিদুল ইসলাম এর প্রচারণা। জেলাজুড়ে কোথাও দেখা যায়নি লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টার তবে লামা পৌরসভা কিছু পোস্টার দেখছে বলে শুনা যাচ্ছে। লাঙ্গলের পক্ষে কাউকে প্রচার-প্রচারণা চালাতেও দেখা যাচ্ছে না।
নতুন ভোটার, ছাত্রলীগের মো. মিরাজুর রহমান, বাবু মার্মাসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, এবার নির্বাচনের তারা প্রথমবার ভোট দেবেন। তাই প্রথম ভোটার হিসেবে অনেক আনন্দ পাচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যাকে খুশি তাকে ভোট দেবেন। যিনি যুব সমাজের উন্নয়নের যে অগ্রাধিকার দেবে এবং এলাকার জন্য যে উন্নয়ন করবে তাকেই ভোট দেবেন বলছেন তারা।
লাঙ্গল প্রার্থী এটিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সবাই আসবে। পছন্দের প্রার্থীকেই সবাই ভোট দেবে। যাকে যোগ্য মনে হবে, তাকেই ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানান।
নৌকা প্রার্থী বাবু বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, প্রতিবারের চেয়েও এবার খুব উৎসাহ উদ্দীপনায় ভোট হবে।
আমি প্রচারে নামার আগেই এলাকার মানুষ আগে থেকেই আমার প্রচারে নেমে গেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে বিপুল ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে। তাছাড়া আশা করছি, আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটার সংখ্যা আরো বাড়বে।
বান্দরবান পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদাই প্রস্তুত আছে। নির্বাচনে সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে দুইজন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে তিনজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্বে থাকবে। এর বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।
এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। আশা করছি, শান্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন শেষ হবে।