ডা. অলসন পরিণত বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। ৯৫ বছর বয়সে ১৯ জানুয়ারি’২২ এই পৃথিবীতে তিনি তাঁর ভ্রমন শেষ করেছেন।
সবাইকে একটা সময় যেতে হয়। তিনিও গেলেন। সক্রেটিস হ্যামলক পান করতে করতে বলেছিলেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নতুন জায়গায় যাচ্ছি, নতুন জায়গায় যাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। আমরা যারা দুনিয়াবাসী তাদের জন্য যেকোনো মৃত্যু বেদনার। আর যারা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন, সক্রেটিসের ভাষায়, তাদের জন্য হয়ত আনন্দের।
১৯৬৫ সালের গোড়ার দিকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার মালুমঘাটে ঝোপঝাড়ের মধ্যে গড়ে তুলেন মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতাল। এটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন সস্তায়, নিরলসভাবে। আবার এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখেও থেকেছেন পাশে। সাহসিকতার সাথে সেবা দিয়েছেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও। ৭১-এ কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধে— যুদ্ধাহত ক্যাপ্টেন হারুন আহমদ চৌধুরীকে সাহসিকতার সাথে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করেছেন। সুস্থ হয়ে পরে (৭১-এ) ক্যাপ্টেন হারুন বার্মায় আশ্রয় নেন।
ডা. অলসনকে প্রথম দেখি ১৯৬৭ সালে আমার বাল্যবেলায়। চিকিৎসা নিতে বাবার সাথে গিয়েছিলাম মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে। এতটুকু বাচ্চা ছিলাম তখন। মনে পড়ে চিবুক নাড়িয়ে আদর করেছিলেন।
এরপর বড়বেলায় যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন সে সুবাদে কয়েকবার কথা হয়েছে তাঁর সাথে। একবার তাঁর বাসায় আপ্যায়িত হয়েছিলাম। নানা বিষয়ে কথা হয়েছিল তখন। চমৎকার মনের এই মানুষটি ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী- সজ্জন। দীর্ঘদেহী ডা. অলসনের পাশে দাঁড়ালে নিজেকে নেহাৎ লিলিপুট মনে হতো।
তাঁর লেখা ‘ডক্টরস ডিপ্লোম্যাসি’ বইটি পড়ার আগ্রহ ব্যক্ত করার পরেও এটি হাতে না আসায় একধরনের অতৃপ্তি রয়ে গেলো।
ডা. ভিগো অলসন, আপনার নতুন ভ্রমন শুভ হোক। স্রষ্টা আপনাকে স্বর্গে রাখুন।
আমরা আপনার মহাপ্রয়ানে শোকাভিভূত। শোক প্রকাশ করছি অন্তরের স্বতস্ফুর্ত উৎস থেকে।
চকরিয়াবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে আপনাকে।