সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফায় আজ সোমবার আরেকজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ মামলায় চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সিএনজি চালক কামাল হোসেনের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হয় বলে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম জানিয়েছেন।তিনি জানান, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ১৫ আসামির আইনজীবী জেরা করেছেন।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। রোববার মামলার তিন নম্বর সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট তিনদিনে মামলার প্রথম দফার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এ মামলায় মোট সাক্ষী রয়েছেন ৮৩ জন।
আদালত সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সাক্ষ্যদানের জন্য ১৫ জনকে আদালত সমন জারি করেছিলেন। এ পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবসে বাদীসহ চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরের বিরতির পর পিপি ফরিদুল আলম জানান,মামলায় চার নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যদান শেষে ১৩ আসামির আইনজীবী জেরা করেছেন।বাকি দুই আসামির আইনজীবী বিরতির পর জেরা করবেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীদের জেরার গতির ওপর নির্ভর করছে কতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হবে। আমরা সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপন করার জন্যে হাজির রাখছি।
মিডিয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পিপি বলেন, যেহেতু এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা সেহেতু আদালত কার্যক্রম নিয়ে বাইরে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তিনি বলেন, আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মিডিয়ায় কথা বলেন,আবার মিডিয়া ট্রায়ালের অভিযোগও করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান,‘ প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজি চালক কামাল হোসেন ঘটনার সময় যা যা দেখেছেন,তা আদালতে বলেছেন। এর চেয়ে চলমান মামলা নিয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। অবশ্যই তিনি এ মামলায় দৈনিক একজনের বেশি সাক্ষ্য নেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন।
মামলায় এক বছর ধরে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে বলে গত রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেছিলেন, এ মামলাটি পরীমণির মতো মিডিয়া ট্রায়ালে পড়েছে। এতে আমরাও বিব্রত,আদালতও বিব্রত। আদালতে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে কড়া পুলিশ পাহারায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এরপর প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আলোচিত এ মামলা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে মামলার ১৫ আসামি কারাগারে রয়েছে।#
: নিজস্ব প্রতিবেদক