চায়ের চেয়ে কফি জনপ্রিয় হলেও উচ্চ মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি কফি। চা খায়নি এমন মানুষ না থাকলেও কফি খায়নি এখনও এমন মানুষ দেশে রয়েছে। বাংলাদেশে একসময় কফি চাষ আকাশকুসুম ছিল। অথচ সেই কফি এখন পাহাড়ে উজ্জল সম্ভাবনার ফসল হয়ে উঠেছে। অচিরেই হয়তো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের নানা দেশে কফি রপ্তানি সম্ভব হবে।
কফি চায়ের মত না হলেও এখন আর ততটা অপরিচিত নয়। কেউ পান করে পরিচিত, কেউ নাম শুনে। কিন্তু অনেকে জানেন, এই কফি আসে দেশের বাইরে থেকে।
বান্দরবানের লামায় কফি চাষ এখনও নতুন। এখানে কেউ কেউ এখনও জানে না নিজের এলাকায় কফি চাষ হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করায় কফি চাষে দিন দিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। প্রথম প্রথম সখ করে দু-একজন কফি চারা রোপণ করলেও এখন কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু করেছেন।
লামা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে পাহাড়ে কিংবা পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠেছে কফি চাষ। এ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে ২৯ হাজার ৭৭৫টি কফি গাছ লাগানো হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে ২০১৮-২১সাল পর্যন্ত ৭ কৃষক, বাণিজ্যিকভাবে ২০২১ সালে ৬৬ জন কৃষক কফি চাষ করে। হর্টিকালচার ও ডিএই-এর মাধ্যমে ৬৬ কৃষককে চারা, সার, নেট ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২.৫ একর করে ৫টি বাণিজ্যিক ও ৫০ শতক করে ৫০টি কফিজাত প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
কৃষি বিভাগের অভিমত, বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের আবাদের পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের। কফি চাষের উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চল। পাহাড়ের অনাবাদি ও আবাদি জমি কফি চাষের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে কৃষকরা। সেইসাথে অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিপ্লব ঘটবে কৃষিশিল্পে।
এ্যাসোসিয়েশন অব ড্যাবটিস্টের কফি এক্সপার্ট প্রশিক্ষক তৈদরাম ত্রিপুরা বলেন, একটি কফি চারার মূল্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ৭০ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে একটা গাছ। ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। এরপর ঢালপাল ছেটে মার্তৃগাছের একফুট উপর থেকে তির্ডকভাবে কেটে দিলে পুনরায় ফলন পাওয়া যায়। ১টি গাছ প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ কেজি ফলন দেয়। এর বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। কফি চাষিদের জন্য সুখবর হচ্ছে, দেশীয় ও বিশ্ববাজারে কফির মূল্য একই থাকে। ফলে এর কোন সিন্ডিকেট থাকে না। দেশে একমাত্র কফি বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, নর্দান এন্ড কফি রোষ্টার কোম্পানি।
নতুন উদ্যোক্তা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা জানান, প্রথমে তিনি আম বাগান সৃজন করলে তা দেখে অনেকে আম বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তেমনি কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে কফি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে ৪ হাজার কফি চারা লাগান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন চন্দ্র বর্মন এ প্রতিবেদককে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করায় দেশে কফি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কফি চাষের দুই তৃতীয়াশ চাষ হয় পার্বত্য অঞ্চলে। বান্দরবান জেলাসহ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য জেলায় আগে থেকে কফি চাষ থাকলেও এত বেশি সাড়া মেলেনি। অধিদপ্তরের উদ্যোগের কারণে প্রকল্পের আওতায় কফি চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষকরা।