মঙ্গলবার রাতে হামুনের তান্ডবে একঘন্টার বাতাসে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় ভেঙে গেছে ২২০টি বসতবাড়ি ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
একই সাথে বাতাসে তান্ডবে গাছচাপা পড়ে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের টুটিয়াখালী গ্রামের জাফর আলমের ছেলে আসকর আলী (৫০) মারা গেছে।
এছাড়া পুরো উপজেলার অসংখ্য বিদ্যুৎ খুটি উপড়ে পড়ায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটা থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা ( এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে পারেনি। অপরদিকে হামুনের প্রভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাকারা, মানিকপুর সড়কের সংযোগ ফাইতং খালের সেতুটি ধসে পড়েছে। ফলে মঙ্গলবার রাত থেকে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
গতকাল সকালে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান ধসে পড়া সেতু পরিদর্শন করে বিকল্প ব্যবস্থায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, অতি বর্ষণ পরবর্তী খালে পানির প্রবল স্রোতে সেতুটির কয়েকটি পিলারের মাটি সরে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে।
স্থানীয় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ফাইতং খালের সেতুটি ধসেপড়ায় আমার ইউনিয়নের হাজারো মানুষ চলাচল দুর্ভোগে পড়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষি ও নিত্যপন্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। আমরা অবিলম্বে ধসেপড়া সেতুটি সংস্কার অথবা পুননির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন জানান, ঘুর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে আমার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১০টি বসতবাড়ি একেবারে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া বেশিরভাগ আগাম সবজি ক্ষেতের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নে ব্যাপক বিশাল আকৃতির গাছ ভেঙ্গে পড়ায় ১৫টি বাড়ি একেবারে ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া অর্ধ শাতাধিক বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, হামুনের তাণ্ডবে আমাদের ইউনিয়নে গাছপালা উপড়ে পড়ে বেশিরভাগ কাচা ঘরবাড়ি ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হবে।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ বলেন, মঙ্গলবার রাতে একঘন্টার বাতাসে হারবাং ইউনিয়নে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
বাতাসের সঙ্গে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে হারবাং জমিদার পাড়া নাপিতের চিতা সড়কের মছনসিকদার পাড়া সড়ক, হারবাং শীলখালী সড়কের গোদার পাড়া সড়ক ও হারবাং এর রাখাইন পাড়া সড়ক ভেঙে গিয়ে রীতিমতো পুকুরে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, হারবাং ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
এদিকে উপজেলার উপকূলীয় এলাকার চিত্র আরো ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে গতরাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় অনেক জনপ্রতিনিধির সাথে তাদের ইউনিয়নে হামুন তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল হাসনাত সরকার বলেন , উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের মধ্যে সবকটি ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাথমিকভাবে হামুনের ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) জেপি দেওয়ান বলেন, ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৫২৮০জন, আংশিক বিধস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ১১১৫টি, সম্পূর্ণ বিধস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ২২০টি, নিহতের সংখ্যা ১জন।
ইউএনও বলেন, ঘুর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে উপজেলা প্রশাসন ৪৪০ বান্ডিল ঢেউ টিন ও ১০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।