কক্সবাজারের দুই পৌরসভা ও চার উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ক্ষমতাসীন দলটি বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের পক্ষ নেওয়া নেতা-কর্মীদের নানাভাবে সর্তক ও দল থেকে বহিষ্কার করেও কোনো ফল পায়নি। নানা চাপের মধ্যেও অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীর চেয়ে ভালো করেছে।
আ.লীগের নেতারা ইউনিয়ন পরিষদের ফলাফল বিশ্লেষন করে বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে সুবিধা পাওয়া ও না পাওয়া নিয়ে দলে তৃনমূল পর্যায়ও দ্বন্দ্ব সংঘাত বেড়েছে। এতে দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্যেও অনেকে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। অনেক ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নে আরও সর্তক হওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করেন দলের একাধিক নেতা।
গত বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় দলের বিদ্রোহী ও র্বাচনে তাদের সহায়তা করা নেতাদের ব্যাপারে আগামী ৯ অক্টোবর জেলা আ.লীগের প্রতিনিধি সভায় এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
গত সোমবার চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা ও জেলার পেকুয়া,কুতুবদিয়া,মহেশখালী ও টেকনাফের ১৪ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুই পৌরসভা ছাড়া ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের ছয়জন, দুইজন আ.লীগের বিদ্রোহী ও চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী(বিএনপিতে যুক্ত) জিতেছেন। ফলাফল স্থগিত থাকা কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির নেতা ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।
ফলাফলে দেখা যায়, জেলার টেকনাফের হ্নীলায় রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নে জাহেদুল ইসলাম ছাড়া কোথাও আ.লীগের প্রার্থী ভালো ব্যবধানে জিততে পারেননি।
এরমধ্যে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরং ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ইয়াহিয়া খান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেননি। ভোটের ফলাফলে তাঁর অবস্থান চার নম্বরে। তিনি পেয়েছেন ৪৯২ ভোট। সে হিসেবে তিনি জামানতই হারাতে বসেছেন। পাশের ইউনিয়ন দক্ষিণ ধুরংয়ের আ.লীগের প্রার্থী আজম সিকদারও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠিকতে পারেননি। তিনিও তৃতীয় হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪৭৬। এ ইউনিয়নের প্রার্থীও জামানত হারাতে বসেছেন। অবশ্যই এ উপজেলায় সামান্য ভোটের ব্যবধান করে আ.লীগের দুই প্রার্থী কোনো মতে জিতে এসেছেন।
একইভাবে মহেশখালী ইউনিয়নের হোয়ানক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা কামাল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয় হয়েছেন। এ ইউনিয়নে দলটির দুই বিদ্রোহীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়রম্যান প্রার্থী আবু ছৈয়দেরও চরম ভরাডুবি হয়েছে। ভোটে তাঁর অবস্থান্ও তৃতীয়। এ ইউনিয়নে বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিয়াউর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে শ্রমিক লীগের উপজেলা সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ জাহান মিয়া দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
আ.লীগের প্রার্থী আবু ছৈয়দ অভিযোগ করেছেন,দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে ভোট করেননি। এমনকি নেতারা তাঁর মুঠোফোনও ধরেননি।
জেলা আ.লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা যাচাই না করে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে নেতা-র্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি- জামায়াতের ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সুবিধা করতে পেরেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম বলেন, যারা দলীয় পদে থেকে ব্যক্তি স্বার্থ নৌকার বিরোধীতা করেছে,ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। এ র্বাচনে দলীয় প্র্রাথীর বিরোধীকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে।