বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সাফারি পার্কের কথা আসলে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের নাম চলে আসবে সবার আগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি কক্সবাজার জেলা। বন-সাগর-পাহাড়-নদী-ঝরনা নিয়ে পর্যটননগরী কক্সবাজার। পৃথিবীর এ রকম সমন্বয়ের শহর নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এ জেলা। আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ জেলার চকরিয়া উপজেলাতেই ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। এটি ‘ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক’ নামেও পরিচিত।
নান্দনিক ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বুনো জীবজন্তুর সমাহারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভিড় করছেন অগণিত দেশি-বিদেশি পর্যটক।
প্রধান ফটকের বাম পাশে রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ। বেষ্টনীর ভেতরেই বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণীর বিচরণ। এরা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। ইতোমধ্যে মেগাউন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সাফারি পার্কের বেশিরভাগ অবকাঠামো নান্দনিক সৌন্দর্যে গড়ে তোলা হয়েছে।
বেষ্টনীর ভেতরেই প্রাণীরা থাকায় সাফারি পার্ক হিসেবে মেনে নেন না অনেকেই। তারপরেও প্রাণী বৈচিত্র্যের অপার সৌন্দর্য আপনাকে মোহিত করবেই। অনায়াসে বাঘ-সিংহসহ অন্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যে কেউ চাইলেই বাসে করে ঘুরে ঘুরে পুরোপার্ক দেখতে পারবেন।
এ পার্কে তথ্য শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, প্রবহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জনের মতো সুউচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ, লতার অপূর্ব উদ্ভিদের সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারি পার্ক।
ছায়াঘেরা পথ, সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সব কিছু মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি।
অস্বচ্ছজলে জলহাতির মুখ উঁচিয়ে থাকা বা বেষ্টনীর ভেতর বাঘের হালুম, হাজার পাখির কিচিরমিচির মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কিছুদিন আগে যোগ হওয়া জেব্রার দল, বুনোহাতির বিচরণ ও বানরের দুষ্টুমি প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবেন। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এ পার্কে স্বাদু পানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমির। এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে জেব্রা, বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সাম্বা হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণসহ পাখ-পাখালির সমাহার। পথের ধারে উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যে কেউ দেখতে পারবেন পুরো পার্কের সীমানা পর্যন্ত। উপভোগ করতে পারবেন অপার সৌন্দর্য।
পার্কজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। আছে পার্কের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। ভেতরে রয়েছে দর্শনীয় বাংলো। দর্শনার্থীদের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি দিতে হবে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যেতে চাইলে আপনাকে রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া, এস আলম, গ্রিনলাইন, হানিফ, শ্যামলী প্রভৃতি পরিবহনের বাসে সরাসরি ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের সামনে নামতে হবে।
ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে রাজধানীর কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলি, চট্টগ্রাম মেইলে চট্টগ্রাম আসতে হবে।
এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়ার ডুলাহাজারা পার্কের রাস্তায় নেমে যেতে পারেন।
এ ছাড়া কক্সবাজার এসে সিএনজি, মাইক্রো কিংবা লোকাল বাসে চড়ে অনায়াসেই ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে যেতে পারবেন।
এখানে থাকা ও খাওয়া : থাকা ও খাওয়ার জন্য কক্সবাজারই বেটার। কক্সবাজারের বিভিন্ন বিচ থেকে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৪০-৪৫ কিলোমিটার। এখানে নানা মান ও দামের আবাসিক হোটেল ও খাওয়ার সুবিধা পাবেন।
চকরিয়া থেকে দক্ষিণে ৭-৮ কিলোমিটার। তাই একেবারেই কাছের চকরিয়াতেও থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। লম্বা ছুটির দিনে বা বিশেষ দিনগুলোতে প্রচণ্ড রকমের ভিড় থাকে। তাই আগে থেকেই হোটেল ও বাসের বুকিং দিয়ে রাখলে সবার জন্য মঙ্গল।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এখন আরও বেশি আর্কষনীয় ও নান্দনিক কলরবে সাজানো হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে মেগাউন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সাফারি পার্কের পুরো এলাকাকে আধুনিক পর্যটন স্পট হিসেবে তৈরি করেছে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যে এসেছে বিশাল পরিবর্তন।
প্রাণীকুলে জন্ম নিয়েছে একাধিক শাবক। সবমিলিয়ে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এখন পর্যটক দর্শনাথী সবার কাছে একটি আর্কষণীয় বিনোদন কেন্দ্র রূপ পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত রোজার ঈদে সাফারি পার্কে দর্শনার্থী আগমন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আশাকরি কোরবানি ঈদেও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থী আগমন নতুন মাইফলক ঘটবে।