মেঘমুক্ত রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, ওটা অরুন্ধতী , ওটা সপ্তর্ষিমণ্ডল, সন্ধ্যাতারা – ঝলমল করছে। বাংলা ভাষার সাহিত্যের আকাশেও অসংখ্য ঝলমলে নক্ষত্র আছে। সেই সব নক্ষত্রকুঞ্জ খুঁজে নিতে খুব বেগ পেতে হয়েছে আমাদের।
পেছনের দিকে যদি তাকাই, সেই সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে কবিতা দিয়ে শুরু হয়েছিল সাহিত্য সাধনার শুভযাত্রা। বাংলাভাষার জন্মও সেই সাথে। পণ্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে জীর্ণ শীর্ণ, খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেছিলেন ১৯০৭ খ্রীস্টাব্দে। পাণ্ডুলিপিটি চর্যাপদের , চর্যাপদ বাংলাভাষার প্রথম সাহিত্য নিদর্শন, চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি। বাংলা সাধন সংগীত শাখাটির সূত্রপাতও হয়েছিলো এই চর্যাপদ থেকেই। সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা।বৌদ্ধ বাউলরা এইধারা প্রবর্তন করেন। চর্যাপদ বৌদ্ধধর্মালম্বীদের ধর্মসঙ্গীত বা দোঁহা নামে পরিচিত। সমকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্রাবলি এই পদগুলোতে উজ্জ্বল। মানুষের জীবনযাত্রা, এর সহজ সরল রূপ রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়াতে এর সাহিত্যগুণ এখনও চিত্তাকর্ষক।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন ৬৫০ খ্রীস্টাব্দে মানে সপ্তম শতকে, সুনীত কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন ৯৫০ খ্রীস্টাব্দ মানে দশম শতকে চর্যাপদ লিখিত হয়েছিল । বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয়ে ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তাঁরা পদগুলো রচনা করেছিলেন । পরবর্তীতে আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে চর্যাপদের সঙ্গে বাংলা ভাষার অনস্বীকার্য যোগসূত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তিসহ প্রতিষ্ঠিত করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সাড়ে ৫১টিই আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। কিছু হয়ত কালের করালগ্রাসে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । এর আগে আমরা জানতাম না কে আমাদের ভাষাসাহিত্যের জন্মদাত্রী ।
চলবে