যুদ্ধ সমাধান নয়। সমাধান রাজনীতি ও কূটনীতিতে-যা টেবিলে বসেই করতে হয়। গাজায় ইসরায়েলি হামলার এক বছর পূর্তির দিনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আলোচনার মাধ্যমে এই অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাই।
ইতোমধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার সম্প্রচার মাধ্যম ‘ফ্রান্স ইন্টারকে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ এই আহ্বান জানান। মাখোঁ বলেন, ‘আমি আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে করি, রাজনৈতিক সমাধানে ফিরে যেতে গাজায় যুদ্ধ করার জন্য (ইসরায়েলকে) অস্ত্র সরবরাহ না করাই এখন আমাদের অগ্রাধিকার। ফ্রান্স কোনো (অস্ত্র) সরবরাহ করছে না।’
ম্যাঁখো আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধ না চাইবে- বন্ধ হবেনা, প্রাণহানী থামবেনা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর স্থানীয় সময় ভোরে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। একটি সামরিক ঘাঁটিসহ নানা স্থানে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ওই দিন ইসরায়েলে ৩০০ সেনাসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। একই সঙ্গে ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। এরপর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও অস্ত্র সহযোগিতা নিয়ে ইসরায়েল গত এক বছরে গাজায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে অন্তত সাড়ে ১৬ হাজারই শিশু। প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি (জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি) বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এক বছরে ইসরায়েলের জন্য কমপক্ষে ১ হাজার ৭ শ ৯০ কোটি ডলার পরিমাণ সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা ইসরায়েলকে এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো সর্বোচ্চ পরিমাণ সামরিক সহায়তা। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কস্টস অব ওয়ার প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
পুরো গাজা এখন এক ধ্বংসস্তূপের শহর। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো অনেক মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে। তাদের হিসাবে এ সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর আগে সেখানে ১ লাখ ৬৩ হাজারের মতো ভবন ছিল। কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে পাওয়া জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এসব ভবনের সব কটি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন যুদ্ধ বন্ধ হলেও গাজার ধ্বংসাবশেষ সরাতেই ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হবে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি বলেছে, আনুমানিক ২৩ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ দূষিত, যা থেকে নানা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, গত বছরে গাজায় তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের শিকার ১০ লাখ মানুষ।
গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজার কোন শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, পুরো প্রজন্ম হারানোর আশঙ্কা তত বাড়বে।
তাই এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ চাই।