গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা চলমান রয়েছে। এর জের ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে
কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকায়। বান্দরবান সীমান্তে কিছুটা শান্ত হলেও গ এক সপ্তাহ ধরে সেন্টমার্টিন ও নাফ নদীর ওপারে ঘনঘন বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এতে আতংকিত অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া নতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশংকাও রয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ওপারে নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে মিয়ানমার অভ্যন্তরে সোমবার ভোর থেকে বিকট শব্দ হচ্ছে। তার প্রভাবে কেঁপে উঠছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও নাফ নদীর এপারে শাহপরীর দ্বীপ। একদিন আগে রবিবার সীমান্তের ওপারে পরিস্থিতি অনেকটা নীরব ছিল।
সীমান্তবাসীরা বলছেন, রাখাইনের মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠির মধ্যে সংঘাত বেড়েছে। এর কারণে এত গুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় থেমে থেমে ব্যাপক গুলি ও মর্টার শেলসহ ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গিয়েছিল। রবিবার গোলাগুলির তীব্রতা কিছুটা কম ছিল। সোমবার ভোর ৫টার পর থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সালাম।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর পর ১/২ টি গুলির শব্দ ভেসে আসছে। নানা মাধ্যমে খবর পাচ্ছি, মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় সরকারি বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলেছে।
ওই এলাকাগুলোতে মূলত রোহিঙ্গাদের বাস। সংঘাতের কারণে তারা প্রাণ বাঁচতে নিরাপদ স্থানে ছুটছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া নদী ও খালে অবস্থান নিয়েছে বলে জানান সালাম। তার আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে আবার নাফ নদী দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে আসতে পারে।
টেকনাফের সর্বদক্ষিণের শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন জানান, ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে এলাকা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও শনিবার ও রবিবার গুলির শব্দ কম শুনা যায়। এতে দ্বীপবাসীর মনে আতঙ্ক কিছুটা কাটলেও সোমবার ভোর থেকে আবারও তীব্র গুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার এইচ এম লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নাফ নদীর সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। দালাল চক্র যেন সক্রিয় হতে না পারে, সে কারণে আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলে সমিতির সভাপতিদের ডেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কাউকে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হতে দেখা না যায়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এক দিন শান্ত থাকার পর আবার আজ সোমবার সকাল থেকে বিকট শব্দে টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে উঠছে বলে জানা গেছে । মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে ।
এদিকে এর প্রভাবে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। ইনানী-সেন্টমার্টিন নৌরুটে দুটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে।
চকো/জে