এ যেনো পরাজিত সৈনিকের প্রাণপণ লড়াইয়ের খেতাব পাওয়া! যা অনুমেয়ই ছিল হয়তো। থাকবে না কেনো? নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। সেটিরই স্বীকৃতি মিলল। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ফুটবল মঞ্চে তাই গোলরক্ষক হিসেবে সেরার মুকুটটি পেলেন আনিসুর রহমান জিকো। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ ফুটবল দলের অন্যতম সেরা এই তারকা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে চব্বিশ ফুট চওড়া ও আট ফুট উঁচু গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে কুয়েতের বিপক্ষে বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান (জিকো) ছিলেন দুর্দান্ত। কুয়েতের একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন অবিচল আস্থায়। শুধু কুয়েতের বিপক্ষেই নয়, সাফের গ্রুপ পর্যায়ের তিন ম্যাচেও দারুণ খেলেছেন। চমৎকার নৈপুণ্যের পুরস্কারটা পেয়ে গেলেন হাতে হাতেই। সাফ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন আনিসুর রহমান।
২০০৯ সালের পর সাফে বাংলাদেশের প্রথম সেমি-ফাইনালের মঞ্চে উঠে আসায় দারুণ অবদান ছিল জিকোর। ম্যাচের পর ম্যাচে গোলবারে তিনি ছিলেন দলের আস্থার জায়গা। কুয়েতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ১০৭ মিনিটে গোল হজমের আগে ও পরের বাকি সময়টায় বাংলাদেশের পোস্টের নিচে শক্ত দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে ওই সেমি-ফাইনালের ২৯ মিনিটে ইদ আল রশিদির শট অনেকটা লাফিয়ে এক হাতে ফিস্ট করে ফিরিয়ে দেন জিকো। প্রথমার্ধের শেষ দিকেও কুয়েতের এই ফরোয়ার্ডের শট আটকান তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধেও পোস্টে তিনি ছিলেন প্রাচীর হয়ে। ৬১তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে আহমেদ আল দেফেরির ফ্রি কিক ফিস্ট করে ফেরানোর দুই মিনিট পর রুখে দেন আল রশিদির আরেকটি প্রচেষ্টা।
৭৪তম মিনিটে আল রশিদির সাইড ভলি দারুণ দক্ষতায় আটকে বাংলাদেশের সম্ভাবনার আলো জ্বেলে রাখেন তিনি। অতিরিক্ত সময়ে প্রথম অর্ধে ওয়ান অন ওয়ান পজিশনে আল খালিদির শট আটকে দেন তিনি।
কিন্তু ১০৭তম মিনিটে আর পারেননি। আব্দুল্লাহ আল বোলৌশির বুদ্ধিদ্বীপ্ত শটের বিপক্ষে কিছুই করার সুযোগ পাননি জিকো। তপু বর্মনের পায়ের ফাঁক দিয়ে শট নিয়েছিলেন বোলৌশি, জিকো কিছু বুঝে উঠতে পারার আগেই বলে দূরের পোস্ট দিয়ে জড়ায় জালে। এই গোলটি শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। বিদায়ঘণ্টা বেজে যায় বাংলাদেশের।
তবে, গতকাল ফাইনালে টাইব্রেকারে কুয়েতকে হারিয়ে আবারও সাফের শিরোপা জিতেছে স্বাগতিক ভারত। ফাইনালে তাদের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং টাইব্রেকারে একটি শট ঠেকিয়েছেন। কিন্তু তারপরও ফাইনাল শেষে সাফের সেরা গোলরক্ষক হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছে আনিসুর রহমানের।
কুয়েতের বিপক্ষে তাঁর অতিমানবীয় পারফরম্যান্সই এনে দিয়েছে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। সেরা গোলরক্ষক হওয়ার পর কাল রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে আনিসুর রহমান লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।
সাফ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক।’ এরপর সেই পোস্টের মন্তব্যে আনিসুর রহমান লিখেছেন, ‘তাদেরকে বলে দিয়েন সাফ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক আপনাদের জিকো।’