লাখো পর্যটক আর ভক্তদের উপস্থিতিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে হয়ে গেল দেশের সবচেয়ে বড় বিসর্জন। রং ছিটানো আতশবাজি ফুঁটিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের করা হয় শোভাযাত্রা। বিসর্জন উপলক্ষে সৈকতে নামে দেশি-বিদেশি পর্যটক আর ভক্তদের ঢল। নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পুরো বিসর্জন পর্যবেক্ষণে রাখে পুলিশ। নানা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন। এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে দুর্গ উৎসবের। ধরণীতে থাকা তার সন্তানদের আশীর্বাদ করে কৈলাসে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আজ শুক্রবার ছিল প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া দশমী। শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে বিরহের সুর বেজে ওঠে। মা দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে সন্তানদের আশীর্বাদ করে। সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে ভক্তদের মাকে বিদায় দেওয়ার অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে দেখা যায়।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বহনকারী ট্রাকগুলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে আসতে থাকে। পুরো শহর জুড়ে নেয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিকেল তিনটার পর থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ভক্ত আর পর্যটকদের পদচারণায় লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। লাবনী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত সনাতন ধর্মবলম্বী সৈকত আগত পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি পরিবার নিয়ে, এ সুযোগে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ছুটে এলাম সৈকতে।
খুলনার খালিশপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি রনিও চম্পা বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের এই দৃশ্যটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজার সৈকতে এই মিলন মেলা না দেখলে বুঝা যাবেনা বাংলাদেশ যে একটা সম্প্রীতির দেশ।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধ ও পূজার ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। বিসর্জনের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেখে খুবই ভালো লাগছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন হলেও সৈকতে নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের মিলন ঘটে।
বিসর্জন দেখতে আসা মালা রাখাইন বলেন, এপিসোড জন দেখার জন্য আমরা বন্ধু-বান্ধব প্রতিবছরই সৈকতে আসি। গতবছর করুনার কারণে আসেনি। এবারে অনেক ভালো লাগছে।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় বিসর্জন টি কক্সবাজার সৈকতে অনুষ্ঠিত হয়। আমরা চেষ্টা করি শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন শেষ করতে। নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের সহযোগিতায় আমরা এটা করে আসছি দীর্ঘদিন থেকে।
কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট এর উন্মুক্ত মঞ্চে চলে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জুনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রণজিৎ দাশের সভাপতিত্বে সজন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতা সহ নানা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে শুরু করে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বিসর্জন উপলক্ষে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম বলেন, বিসর্জন উপলক্ষে সৈকতের বেশ কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে সেখান থেকে পুরো অনুষ্ঠানটি পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ সদস্যরা। সৈকত ছাড়াও পুরো জেলাজুড়ে দুর্গোৎসব উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিসর্জন মঞ্চ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ শেষে সমুদ্র সৈকতে শুরু হয় বিসর্জন। এরপর একে একে ৩০৪ টি মণ্ডপের প্রতিমা নিরঞ্জন দেওয়া হয় বঙ্গোপসাগরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নিরঞ্জন।
দুর্গোৎসব সমাপ্তির সাথে সাথে ধরণী তে আসা দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন কৈলাসে।