১৮ মামলার একটি বিচার কাজ শেষ করা যায়নি, হতাশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়
মাইনউদ্দিন হাসান শাহেদ
কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলার নয় বছর পূর্ণ হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর। এ হামলার ঘটনায় উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে একটি মামলারও বিচার কাজ শেষ করা যায়নি। আদৌ এ সংক্রান্ত ১৮টি মামলার বিচার কাজ শেষ করা যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়।
গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবারও আদালতে বিচারাধীন দুটি মামলার ধার্য দিন ছিল। তবে মামলার সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার কার্যক্রম বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
২০১২ সালের এইদিনে ফেসবুকে এক যুবকের পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননাকে কেন্দ্র করে রামুর ১২টি বৌদ্ধবিহার, ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরও ছয়টি বৌদ্ধবিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।
পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি বৌদ্ধবিহারে হামলা চালানো হয়। এতে পুড়ে ও ভাঙচুর করে ধ্বংস করা হয় বিহারের কয়েক শ বছরের মূল্যবান নিদর্শন।
এ হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রামু,কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফে পুলিশ বাদী হয়ে ১৯টি মামলা করে। এরমধ্যে আপসে একটি মামলার নিষ্পক্তি হয়। এসব মামলায় ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরমধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ছিল ৩৭৫ জন। পরবর্তীকালে ১৮টি মামলায় ৯৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এতে পুলিশের ইচ্ছে মতে আসামি ও সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছে মনগড়া। দেখা গেছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
এদিকে হামলার এক বছরের মধ্যে সরকার সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে বিহার ও ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘর পুন:নির্মাণ করে দেয়। এ ঘটনার পর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল গত নয় বছরে এসে সেটা অনেকটা কাটিয়ে ওঠেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও ফিরেছে। কিন্তু বিচারের জায়গায় সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ এ দীর্ঘ সময়েও মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রমে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
রামুর সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষর্শী সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া চকোরীকে জানান, যেভাবে মামলাগুলো এগুচ্ছে আদৌ কারও শাস্তি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি তো আছেই,তাই আমরা এ ঘটনার বিচার না চাওয়াটাই এখন বেশি নিরাপদ মনে করছি। তবে আশংকা একটাই এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুল আলোচিত একটি ঘটনা ছিল। এরকম মামলারও যদি সঠিক বিচার না হয়, অপরাধীরা শাস্তি না পায়-তাহলে এ ধরনের ঘটনা বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষু প্রজ্ঞানন্দ বলেন, রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলার নয় বছর হলো। বুদ্ধের শিক্ষা সাম্যের,শান্তির। এ হামলার ঘটনায় জড়িতদের মনে সাম্যের উদয় হোক,অহিংস দর্শনে দিক্ষীত হোক-এটাই কামনা করি।
কক্সবাজার আদালতের পুলিশ পরিদর্শক চন্দন কুমার চক্রবর্তী চকোরীকে জানান, সব মামলা অভিযোগ গঠনের পর বিচারাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, এ মামলার সাক্ষীদের বেশির ভাগই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। তাঁদের সাক্ষীর জন্যে সমন দেওয়া হলেও ঠিকমতো হাজির হচ্ছেন না। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম বন্ধ ছিল জানান তিনি।