কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৫ ফাল্গুন শুরু হয়েছে ঐতিহাসিক শিব চতুর্দশী পূজা ও আদিনাথ মেলা। মৈনাক পাহাড়ের পাদদেশে যেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলন মেলা। ইতিমধ্যে দূরদূরান্ত হতে এসেছেন হাজার হাজার দর্শনার্থীরা।
এ বছর শিব চতুর্দশী পূজার মূল দর্শনের লগ্ন সোমবার রাত ২.৫১ টা থেকে লগ্ন শুরু হয়ে শেষ হবে ১ লা মার্চ মঙ্গলবার রাত ১.০৮ মিনিটে। এ ২ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল বয়সের নর-নারীরা ডাব, দুধ দিয়ে একে একে মহাদেব শিবকে স্নান করানোর মধ্যে দিয়ে নিজেদের পূণ্য অর্জনের চেষ্টা করবেন। শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয়, দেবাদিদেব মহাদেব শিবকে দর্শন ও স্নান করানোর জন্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নর-নারীদেরও ঢল নামে আদিনাথ মন্দিরে। তবে যারা কাজের ব্যস্ততা কিংবা টাকা-পয়সা সঙ্কুলানের কারণে মহেশখালীর আদিনাথে গিয়ে শিব লিঙ্গকে দর্শন করতে পারেন না তারা কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়াস্থ শ্রীশ্রী কৃষ্ণানন্দধাম, সাবজর্নীন স্বরসতী বাড়িতে দুধ ও ডাব দিয়ে শিবকে স্নান করাতে পারবে।
হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও এ মিলনমেলায় সামিল হয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নর-নারীরা। পূজারী আর পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে আদিনাথের মৈনাক পাহাড়ের চূড়া। আর বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষে গড়ে উঠা এ পাহাড়ের চূড়ায় লাখো নর-নারীদের মিলন মেলা।
উল্লেখ্য আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী উপজেলার সিন্ধু নদীর তীরে মৈনাক পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে শ্রী শ্রী মহাদেবের এক অলৌকিক শিবলিঙ্গ, এর পাশাপাশি আছে নেপাল থেকে আনা শ্রীশ্রী অষ্টভূজার (দুর্গামূর্তি) শ্বেতপাথর’র মূর্তি। পাহাড়ের উপর দৃশ্যমান জোড়া পুকুর, এছাড়া আরও রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা একজন দর্শনার্থী ও ভ্রমণ প্রিয় মানুষকে দিতে পারে খুশির এক বিনোদন।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম এর সাথে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত মাক্স ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এদিকে সাগর পথে মহেশখালী পারাপারে কোন পূজারী ও পর্যটকদের অসুবিধা কিংবা দুর্ভোগের কবলে পড়তে না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই নিকট আইন-শৃংখলার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আদিনাথ দর্শনে আসা হাজার হাজার নর-নারীদের নিরাপত্তা ও মেলাকে সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে থানা প্রশাসনের পক্ষ হতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদিনাথ মন্দির সংস্কার কমিটির সভাপতি শান্তি লাল নন্দী জানান, এই বছর স্থানীয় প্রশাসনের কাছ হতে মেলার দশদিনের অনুমতি চাওয়া হলে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক দিক বিবেচনা করে ১০ দিনের অনুমতি দিয়েছেন৷ এই লক্ষ্যে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে ৷
তাছাড়া গত বছরের চাইতে এই বছর মেলায় লোক সমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রায় দুইশো জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে বলেও জানান তিনি।