বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সামনে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বুধবার মধ্য রাতে এ ঘটনা ঘটে।
শাহবাগ থানার ওসি মো. খালিদ মনসুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মি. মনসুর জানান, “ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়েছে কী-না, তা তদন্তের পরে বোঝা যাবে। কারণ, তখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।”
বিবিসিকে মি. মনসুর জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিকে মোবাইল চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া হয়।
তবে, এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয় নি বলে জানান তিনি।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা মারা গেছেন।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বক্কর বিবিসি বাংলাকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গতকাল রাতে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান শামীম। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকার একটি দোকানে ছিলেন শামীম। সেখানে বেশ কিছু শিক্ষার্থী তাকে মারধর করে।
পরে তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাত সাড়ে আটটায় তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আহত অবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুধবার রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় থাকতেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ই জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগতরা যে হামলা করেছিল, তাতে তিনি যুক্ত ছিলেন।
এদিকে ধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দু:খপ্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে অপরাধী বা সন্দেহভাজনকে পুলিশে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মি. চৌধুরী বলেন, “একজন অন্যায় করলে আইনের হাতে তাকে তুলে ধরেন। আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোন অধিকার নেই। আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। ইনোসেন্ট লোক যেন কোন অবস্থায় হেনস্থা না হয় জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।”
এছাড়া, শুধুমাত্র ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম মামলায় দেয়ার অনুরোধ করে মি. চৌধুরী বলেন, “আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ শুধু যারা দোষী তাদের নাম দেন। অন্যদের নাম দিয়েন না। অন্যদের নাম দিলে তদন্ত করতে সময় ও বেশি যাচ্ছে এবং অনেক সময় নিরীহ লোকও যেন হেনস্থা না হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
“মিডিয়াতেও বলছি, পেপারে দিছি যে সাধারণ লোক যেন হেনস্থা না হয়। ইনভেস্টিগেশন ছাড়া কাউকে এরেস্ট করা হবে না।”
“ডিবিকে আজকেই ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিছি, পরিচয় তারা নিজেরা দিবে, তারপরে ধরবে। এখানে ধরার কথা শুধু ক্রিমিনালদের। সাধারণ মানুষদেরকে তো ধরবে না” বলেন মি. চৌধুরী।
পুলিশ যাতে জনবান্ধব হয় এটা নিয়ে পুলিশের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মি. চৌধুরী।
সূত্র: বিবিসি