কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের চাঁন্দার পাড়া এলাকার আজিজিয়া জামেউল উলুম মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মৌলানা আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে ছাত্রদের নিয়মিত বলৎকারের অভিযোগ ওঠেছে। এর জেরে ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা। এরপর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক আবুল কাসেম।
এদিকে গত সোমবার (২৮ আগস্ট) শিক্ষক মৌলানা আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে রেজ্যুলিউশন করেছে মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষকেরা। এতে দাবী করা হয়, স্থানীয়দের অভিযোগ ও ছাত্রদের অভিযোগ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের সুষ্ঠু তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই পরিচালনা কমিটির কাছে এ ঘটনার সুন্দর সমাধান চেয়েছেন তারা।
আজিজিয়া জামেউল উলুম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক মৌলানা জিয়াউল হক বলেন, ১৯৬৬ সালে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এ মাদ্রাসা, এতিমখানা, হেফজখানা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় চার শতাধিক ছাত্র রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১৬ জন। মাদ্রাসায় সপ্তম (পঞ্চুম) শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর থেকে মৌলানা আবুল কাসেম গা-ঢাকা দিয়েছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেছি।
সিনিয়র শিক্ষক মৌলানা হাফেজ আকতার আহমদ ও ইয়াসিন সোলতানী বলেন, মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মৌলানা আবুল কাসেম আবাসিক ছাত্রদের সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ইতিপূর্বে এক ছাত্রের অভিযোগ স্বীকার করে অবৈধ এ কাজ করবে না মর্মে তিনি অঙ্গীকারনামা দেন। সম্প্রতি তিনি ছাত্রদের সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার শুরু করলে অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দা ফুঁসে ওঠে। তাই মাদ্রাসার শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষক আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা লিখিত রেজ্যুলিউশনের মাধ্যমে পরিচালনা কমিটিকে জানিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, শিশু সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ওই মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষক আবুল কাসেম গা টিপার নাম করে আমার সন্তানকে নিজের রুমে নিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে। শুধুমাত্র আমার সন্তান নয় অনেক ছাত্রের সাথে এমন আচরণ করেন শিক্ষক নামধারী ওই লম্পট-কুলাঙ্গার। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
এব্যাপারে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাতুল ইসলাম বলেন, কোন শিক্ষকের নৈতিক স্খলনের দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। মৌলানা আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঘৃণিত অপরাধ। এ অপরাধের প্রতি আমি নিন্দা জানাই। পরিচালনা কমিটির সাথে বৈঠক করে বিধিমতে তাকে বরখাস্ত করা হবে।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বদিউল আলম বলেন, মৌলানা আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের অভিযোগ বেশ পুরনো। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মৌলানা আবুল কাসেম বলেন, সম্প্রতি কোন ছাত্রের সাথে আমি অনৈতিক কিছু করিনি। পুরনো একটা বিষয় টেনে এনে কিছু শিক্ষক আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে উৎখাতের চেষ্টা করছে।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্য্য বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।