কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে অবস্থিত সোসাইটি কাঁচাবাজারে পন্য বিক্রিতে গলাকাটা বাণিজ্য ও ওজনে কারচুপির ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারটি সরকারি অনুমোদিত না হওয়ার কারণে মুলত প্রশাসনের বাজার মনিটরিং বা তদারকি না থাকায় চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ডিজিটাল ওজন স্কেলের ফাঁদে ঠকছেন ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দোকানের প্রতিটি স্কেলে কেজি প্রতি ১০০-১৫০ গ্রাম কম দিচ্ছেন। বিশেষ করে মুরগি, মাংস, মাছ ও ফলের দোকান গুলোতেই চলছে ওজনে ঠকানোর কারবার।
জানা গেছে, দীর্ঘ কয়েকযুগ আগে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গড়ে তোলা চকরিয়া পৌরশহরের সোসাইটি কাচাবাজারে কমপক্ষে ২০টি মুরগির দোকান, ১০টি গরু মাংস দোকান, শতাধিক মাছের দোকান ও দেড় শতাধিক সবজির দোকান রয়েছে। এসব দোকানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ক্রেতা আসেন বিভিন্ন মালামাল কিনতে।
দোকান গুলোতে ডিজিটাল স্কেলে ওজন পরিমাপে মালামাল বিক্রি করছেন। সেইভাবে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্রেতারা ওজনে কম দিয়েছে কী না সেটা যাচাই বাছাই করার সুযোগ নেই। কারণ চিরিঙ্গা কাচাবাজারের সব ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট করে একধরণে জিম্মি করেছেন ক্রেতাদের। ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ছেন মুরগি ও গরু মাংসের দোকানে। তারা প্রতিনিয়ত ওজনে কম দিচ্ছেন। এসবের প্রতিবাদ করলে উল্টো মুরগি ব্যবসায়িরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে ক্রেতার উপর তেড়ে আসেন।
এছাড়াও চিরিঙ্গা কাচাবাজারে কোন দোকানে মূল্য তালিকা নেই। যার যার মতো করে পন্য সামগ্রীর উচ্চ মূল্যে নিচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মূল্য তালিকা জুলিয়ে রাখার জন্য বলা হলেও তা মানছে না অসাধু ব্যবসায়িরা।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, চিরিঙ্গা কাচাবাজারে ক্রেতাদের জিম্মী করে মালামাল বিক্রি করছেন। ডিজিটাল স্কেল ওজনে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম কম দিচ্ছেন। ওজন মাপার যন্ত্রটি একেবারে পুরনো। প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। মুলত প্রশাসনের নজর না থাকায় মুরগি ও মাংস ব্যবসায়িরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
শুক্রবার রাতে সওদা করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন চকরিয়া থানার পুলিশ কনেষ্টবল মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, চকরিয়া থানার মেসের জন্য মুরগির দোকানদার আরফাতের কাছ থেকে ৬ কেজি মুরগি ক্রয় করি। পরে আমার সন্দেহ হলে অন্য দোকানে গিয়ে পরিমাপ করে দেখা যায় ১ কেজি কম। আমি যখন কম দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবাদ করলে উল্টো মুরগি ব্যবসায়িরা জড়ো হয়ে আমাকে মারতে আসেন।
সোসাইটি কাচাবাজারের মুরগি ব্যবসায়ি আমির হোসেন বলেন, আমাদের ডিজিটাল মিটারে কোনো কারচুপি নেই। ওজনে কম দিয়েছি কী না তা বাইরে মাপার সুযোগ আছে। আমাদের ব্যবসার সুনাম রয়েছে। বাজার মূল্য নেবো কিন্তু ওজনে কম দিবো না।
এভাবে মাছের দোকান, মুরগির দোকান, তরকারির দোকান, ফলের দোকানের মতো ভাসমান দোকানগুলোতে তা যাচাই করার সুযোগ নেই। ফলে এসব দোকানীরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, চকরিয়া থানার কনেষ্টবল মিজান মেসের জন্য বাজার থেকে মুরগি কিনতে গেছেন। তাকে ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। পরে প্রতারক ওই ব্যবসায়িকে গ্রেফতার করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এরপরও প্রতারিত কোন ক্রেতা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, পবিত্র রমজান মাসে বাজার মনিটরিং করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে কোন অসাধু ব্যবসায়ি রমজান মাসে ক্রেতাদের প্রতারিত করতে না পারে। বিএসটিআইকে সাথে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
চকো/জে