রোববার ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ৮ ইউপি নির্বাচনে ৭৩টি ভোট কেন্দ্রে শান্তিপুর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নারী-পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো।
বিকাল চারটার আগে প্রতিটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও বুথ জটিলতার কারণে ভোট কাস্টিং ধীরগতি হওয়ায় ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন নারী ভোটাররা।
অবশ্য এই কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে পুরুষ ভোটাররা চারটার আগে ভোটদান শেষ করে।
তবে শেষ কথা হলো, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের মধ্য দিয়ে বড়ধরণের কোন ঘটনা ছাড়াই ৮ ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, চিরিংগা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, বমুবিলছড়ি, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে।
তবে সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউনিয়নের গতকাল সংরক্ষিত নারী ও পুরুষ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অপর ৭ ইউনিয়নে গতকাল যথারীতি সকল পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৎমধ্যে ফাঁসিয়াখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ও অন্য ছয়টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হয়েছে ব্যালট পেপারে।
রোববার রাত সাতটার পর থেকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ৮ ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.শহিদুল ইসলাম কন্ট্রোলরুম থেকে মাইকিং করে ফলাফল ঘোষণা করেন। ওইসময় প্রতিটি ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত রির্টানিং কর্মকর্তা ও প্রিসাডিং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেসরকারি ফলাফলে ৮ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চারজন, দুইজন বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) ও জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) দুই প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিতরা হলেন সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম, হারবাং ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মেহেরাজ উদ্দিন মিরাজ, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মনজুরুল কাদের, ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হেলাল উদ্দিন, চিরিংগা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী জামাল হোছাইন চৌধুরী, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী হাসানুল ইসলাম আদর, খুটাখালী ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) বর্তমান চেয়ারম্যান মো.আবদুর রহমান, বরইতলী ইউনিয়নে জামায়াত সমর্থিত (স্বতন্ত্র) মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী মাঠে দুইজন জুড়িসিয়াল ও ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে উপজেলার ৮ ইউপি নির্বাচনে মোট ৭৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোটের দিন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সদস্য।
অপরদিকে, ভোট কেন্দ্র গুলোতে ৪ জন রির্টানিং কর্মকর্তার তত্তাবধানে ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পালন করেন ৭২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৩৪০ জন সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৬৮০ জন পোলিং কর্মকর্তা।
নির্বাচনে সুরাজপুর-মানকিপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদ ছাড়া এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৭ জন, সাধারণ মেম্বার পদে ৩ শত ৫৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে ১ শত ২জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আট ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৮ হাজার ৮৬৩ জন ও মহিলা ভোটার ৬২ হাজার ৭৮৫ জন।
কক্সবাজার সহকারি পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো.তফিকুল আলম বলেন, ৮ ইউপি নির্বাচনে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা যায়। ফলে কোনো ধরণের আতঙ্ক ছাড়াই ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।
৮ ইউপি নির্বাচনের সমন্বয়ক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও র্যাব আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এছাড়া ৮টি ইউনিয়নে পুলিশের মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবি ও র্যাবের কয়েকটি টিম বিভক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।
নির্বাচনে দুপুর থেকে মাঠে ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার।
নিরাপত্তা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন দুইজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ও ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
এছাড়াও নির্বাচন সার্বিক ভাবে মনিটরিং করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। সবমিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সাড়ে ৩ হাজার সদস্য কাজ করেছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে।
তিনি বলেন, প্রার্থী, ভোটার ও জনগনের সহযোগিতা ছিল বলেই বড়ধরণের কোন ঘটনা ছাড়াই প্রত্যেক ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।