বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেষে গড়ে উঠা বিস্তৃর্ণ উপকূলীয় জনপদ উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নে এবার সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে।
অর্থকরী ফসল পান সুপারি উৎপাদন ও বাজারজাত করে একাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী স্বাবলম্বী হয়ে উঠার ঘটনায় দিন দিন সুপারি চাষাবাদের পরিধি বাড়চ্ছে। কৃষকেরা বলছে যে পরিমাণ জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে তার চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ লাভবান হয়েছে সুপারি চাষাবাদের মাধ্যমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে কোনরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংগঠিত না হয়ে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে সুপারির উৎপাদন আশানুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে সুপারির দাম চড়া থাকার কারণে কৃষকের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।
পান সুপারি চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল এ ইউনিয়নের দু’তৃতীয়াংশ পরিবার সুপারি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সাগর উপকূলের দীর্ঘতম ব্যস্ততম এলাকা সোনারপাড়া বাজার ঘুরে বিভিন্নশ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে উৎপাদিত পান সুপারি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করে সরকার এখাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হলেও স্থানীয় চাষীরা সরকারি ভাবে কোন সহায়তা পাচ্ছে না। যে কারণে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সুপারি চাষাবাদে কৃষকেরা ঝুঁকি নিতে পারছে না।
একাধিক কৃষক জানান, তারা প্রত্যন্ত এলাকা ও পরিত্যক্ত জমিতে সুপারি চাষ করে আসলেও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের সময়মত সাহায্য সহযোগীতা পাওয়া যায় না। যে কারণে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের আক্রান্ত হয়ে কৃষকেরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
নদী মার্তৃক ইউনিয়ন জালিয়াপালংয়ের নিদানিয়া গ্রামের প্রান্তিক চাষী এনামুর রশিদ জানায়, সে তার বসতভিটা সংলগ্ন ৪০ শতক জমিতে শতাধিক সুপারি গাছ লাগিয়ে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছে। চলতি মৌসুমে তার বাগানটি দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে দাবী করে ওই চাষী জানায়, এ জমিতে ধান চাষ করে তারা লাভবান হতে পারেনি।
স্থানীয় সুপারি বেপারি জমির হোসেন ও আলি মদন জানায়, সুপারি বিক্রির মাধ্যমে এলাকার ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক হতদরিদ্র চাষীদের মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে। যে কারণে অন্যান্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী থেকে শুরু করে মাঝারী ও বড় শ্রেণির পরিবার গুলো সুপারি চাষাবাদের দিকে ঝুঁকেছে।
একাধিক সুপারির বাগান মালিক জানায়, চলতি মৌসুমে বাজারে সুপারির মূল্য বৃদ্ধি ও বাগানে বাম্পার উৎপাদনের ফলে ঘরে ঘরে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। নি¤œ ও প্রান্তিক চাষীদের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হলে এখানে উল্লেখযোগ্য সুপারি উৎপাদন সম্ভব। আর তা দিয়ে বেকারত্ব দূরীকরণে একটি দৃশ্যমান ভূমিকা রাখবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপারির চালান সরবরাহে জড়িত পাইকারী ব্যবসায়ী সোনারপাড়া গ্রামের শামশুল আলম সওদাগর জানায়, জালিয়াপালং ইউনিয়নের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা সোনারপাড়া বাজার হতে মৌসুমে সাপ্তাহিক কোটি টাকার সুপারির চালান দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। সুপারি ব্যবসা করে এখানকার হাজারেরও অধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বাবলম্বী হয়েছে। বর্তমানে ওই সব ব্যবসায়ীরা শহরের বিভিন্ন মোকামে সুপারি সরবরাহ করছে।
সদ্য নির্বাচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান এস এম ছৈয়দ আলম চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নে প্রতিটি পরিবারে কিছু না কিছু পান সুপারি চাষাবাদ করে থাকে। তাছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বাজারজাত করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পর্যটন এলাকা এ ইউনিয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার পরেও জালিয়াপালং ইউনিয়নে ততদিক উন্নয়ন হয়নি।
এ এলাকার প্রায় ২৫ কিলোমিটার জুড়ে সমুদ্রের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ এ উপজেলাকে দেশের মানচিত্রে দৃশ্যমান করেছে। পর্যটন এলাকা হিসেবে উন্নয়ন করা হলে সরকার এখাতে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, অর্থকরী ফসল পান সুপারি সহ বিভিন্ন প্রজাতির তরি তরকারি, শাক সবজি¦ উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে এ ইউনিয়নে তথা এ উপজেলায় উৎপাদিত পান সুপারি বিদেশে রপ্তানী করতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি বলেন, এ উপজেলায় সাড়ে ৪শ’ একর জমিতে পান সুপারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে তা অনেকগুন বেড়েছে।