বিশ্বে দ্রুত গতিতে বাড়তে কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবহারের। বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একই সঙ্গে তারা গণহারে কর্মী ছাঁটাই করছে। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, টুইটারসহ আরও বেশকিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। এখন তাদের লক্ষ্য কর্ম সংখ্যা কর্মী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই) ব্যবহার করবে।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতে আগামী ২৫ বছরে বহু মানুষ কর্ম হারা হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে নতুন কর্মক্ষেত্রেও তৈরি হবে। তকে এসব কর্মক্ষেত্রে নিজেকে যুক্ত করতে প্রযুক্তি সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞান থাকতে হবে।
আগামী ২৫ বছরে যেসব ক্ষেত্রে মানুষ চাকরি হারাতে পারে তার একটি তালিকায় দিয়েছে রিডার ডাইজেস্ট।
১. ব্যাংক টেলার
দ্য গ্রেট গুয়াক অব এর প্রধান নির্বাহী বলছেন, মানুষ এখন খুবই কমই ব্যাংকে যায়। অনলাইনের মাধ্যমেই ঘরে বসে সে ব্যাংকের যাবতীয় কাজ করে। ফলে দিনকে দিন ব্যাংকের সংখ্যা কমে আসছে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে ৪২ হাজারের মতো ব্যাংক কর্মী আমেরিকাতে চাকরি হারাবেন। কারণ ব্যাংকের কাজের জন্য মানুষ ব্যাংকে যাবে না। এজন্য অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দেওয়ারও দরকার হবে না।
২. টোলবুথ অপারেটর
মহাসড়কে চলাচলে অনেক ক্ষেত্রে সেতু পার হওয়ার আগে টোল দিতে হয়। যেখানে মানুষ টোল আদায় করছে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব টোলবুথে মানুষ আর কাজ করবে না। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষের সহযোগিতা ছাড়াই টোল আদায় করা সম্ভব হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যে প্রায় ১২০০ টোলবুথ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
৩. মর্টগেজ ব্রোকার
আবাসন খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এমন অবস্থায় এ খাতে কর্মীদের বেতন কমানোর জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। ফলে এ খাতের অনেকে চাকরি হারাবেন।
৪. ক্যাশিয়ার
ব্যাংক কিংবা বড় কোনো দোকানে গেলে সেখানে টাকা নেওয়ার জন্য ক্যাশিয়ার থাকে। কিন্তু উন্নত দেশে খুব দ্রুতই এ পথটির বিলুপ্তি হবে। ফলে অনেকে চাকরি হারাবেন।
৫. ট্রান্সলেটর/অনুবাদক
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ভাষা অনুবাদ করার জন্য একজন অনুবাদকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু একজন অনুবাদকের কাজ যদি আপনার মোবাইল করে তাহলে আপনি কেন টাকা খরচ করে অনুবাদক রাখতে যাবেন?
৬. কম্পিউটার সারানো টেকনিশিয়ান
আধুনিক কম্পউটার গুলোতে এমন সফটওয়্যার দেওয়া হচ্ছে যেগুলো নিজ থেকেই সমস্যা চিহ্নিত করতে পারে। ফলে কম্পিউটার নষ্ট হতে তা সে নিজেই সারিয়ে নিতে পারবে। এজন্য সামনের দিনগুলোতে আপনাকে কম্পিউটার নষ্ট হলে টেকনিশিয়ানের কাছে নিতে হবে না।
৭. গ্রাহক সেবা প্রতিনিধি
বর্তমানে বাজারে কোনো নতুন পণ্য আসলে তা মানুষের কাছে পরিচিত করানোর কাজ একজন বিক্রয় প্রতিনিধির। আগামী সেই কাজটি করবে একজন রোবট।
৮. বাণিজ্যিক পেইন্টিং
কয়েক বছর আগেও পেইন্টিং এর জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। আবার পেলেও তাদের দাম ছিল চড়া। তবে সময় যত যাচ্ছে যাচ্ছে পেইটিং কারীদেরও কর্ম ফুরিয়ে আসছে। তাদের এ জায়গা দখল করবে কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন রোবট।
৯. লাইব্রেরিয়ান
লাইব্রেরিয়ান চাকরিটি যদিও অটো-মোবাইল শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মূল কারণ হচ্ছে মানুষের জীবন-যাত্রার পরিবর্তন। এখন মানুষ বই পড়ার জন্য লাইব্রেরি যায় না। সবাই এখন মোবাইলে বই পড়ে বা অডিও বই শুনে থাকে।
১০. রেস্টুরেন্ট কর্মী
অনেক রেস্টুন্টে মানুষের পরিবর্তে গ্রাহকের কাছে খাবার দেয় রোবট। তবে দিন দিন এ প্রক্রিয়া আরও বাড়ছে। ফলে রেস্টুরেন্টে যারা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন তারা দ্রুতই তাদের কর্ম হারাবেন।
১১. এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলার
অটো-মেশিনগুলো ভবিষ্যতের জব র্মাকেটগুলোতে বিশাল জায়গা দখল করতে চলেছে। কিন্তু অনেকে ধারণা করছেন বিশেষ কিছু কাজে এই অটো-মেশিনগুলো ব্যবহার করা হবে যেখানে কোনো মানুষ যদি ভুল করে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ। তেমনই একটি কাজ হল এয়ার -ট্রাফিক কন্ট্রোলার। হয়তো ভবিষ্যতে এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাজটি পুরোপুরি এআই দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
১২. গভীর সমুদ্রের ডুবুরি
বিগত কয়েক দশক ধরে গভীর সমুদ্রের ডুবুরিরা সমুদ্রের বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধান করা সহ গবেষণার কাজও করে আসছে। কিন্তু এই কাজগুলো করতে দক্ষতার প্রয়োজন এবং সেই সাথে এটি ভীষণ বিপদজনক। তাই বর্তমানে এসব কাজে রোবট ও ড্রোন ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৩. সারিবদ্ধ চাকরিজীবী
বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে একই কাজ অনেক মানুষ করে থাকেন। প্রত্যেকের কাজের পরিধি ভিন্ন। কারণ এসব কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে অনেকে মিলে কাজ করেন। কিন্তু প্রযুক্তি এ জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
১৪. গাড়ি মেকানিক
টেসলা অটো-মোবাইল জগতে বিপ্লবের ঢেউ নিয়ে এসেছে আর এটা কেবল শুরু। অটো-মোবাইল শিল্পজগত এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ-নির্ভর হওয়ার পাশাপাশি নিজে ড্রাইভ করতে পারবে এমন গাড়ি তৈরির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতের মেশিনগুলো কম্পিউটার সায়েন্টিসদের মতো আচরণ করবে। অনেক বিশ্লেষকদের ধারণা ভবিষ্যতে এমন মেশিন তৈরি করা হবে যা মানুষের সাহায্য ছাড়া নিজেই গাড়ির ছোট-বড় সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবে, কোনো মানুষ মেকানিকের সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো গাড়ি মেকানিক চাকরিটি হারিয়ে যাবে।
১৫. মূল্য বিশ্লেষক
বর্তমানে এআই ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল্য-বিশ্লেষণের কাজগুলো করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভবিষত্যে পে- রোল ক্লার্ক, পে-রোল ম্যানেজার, পে-রোল স্পেশালিস্ট এই চাকরিগুলো হারিয়ে যাবে। আর এই কাজগুলো নির্ভুলভাবে করারনোর জন্য এআই-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।
১৬. পে-রোল কর্মী
অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন ভাতা হিসাব নিকাশের জন্য একজন পে-রোল কর্মী থাকেন। এই কাজটি সময় সাপেক্ষ। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কঠিন কাজটি সহজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে এ খাতে কর্মরতরা চাকরি হারাবেন।
১৭. ট্যাক্সি ও উবার ড্রাইভার
এআই ব্যবহার করে ড্রাইভার ছাড়া ট্যাক্সি বা উবার চালানো যাবে। সম্প্রতি এমন গাড়ির দেখা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই গাড়িতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে ম্যাপে ঠিকানা নির্দেশ করে দিলে এটি আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। আর ট্যাক্সি বা উবার যদি এআই – এর মাধ্যামে চালানো হয় তাহলে চাকরি হারাবে গাড়ি চালকেরা।
১৮. গুদাম কর্মী
এআই-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে যে চাকরিটি সবার আগে হারিয়ে যাবে সেটি হল গুদাম কর্মী। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমাজনের জেফ বেজোস বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি তার ওয়্যার হাউস বা গুদামগুলোকে পুরোপুরি মেশিন চালিত করতে চান। আমাজন এমন কিছু রোবট তৈরি করছে যেগুলো সপ্তাহে ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা করে কাজ করতে পারবে, যা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এলন মাস্কও এআই ব্যবহারের ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহী কিন্তু এলন তার প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি এআই দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে চান না।